‘দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করেছিল বিএনপি’

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৫ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, এই দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি শুরু করেছিল বিএনপি। ৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়েই বিএনপি নামক দলের আবির্ভাব হয়েছিল, তার প্রতিষ্ঠাতা খুনী জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি আইন করে বিচার বন্ধের মাধ্যমে বিচারহীনতার সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন।
গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, দালাল আইন বাতিল করে দিয়ে সাড়ে ১১হাজার যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধী, রাজাকার-আলবদরদের মুক্ত করে দিয়েই উনি বিচারহীনতার সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন। জেলখানায় মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড হয়েছিল, সেই হত্যার বিচার বন্ধ করেছিল বিএনপি। আজকে তারাই সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। আজকে আমাদের নেতাকর্মীদের অবগত করতে চাই, বিএনপি জামাতের মিথ্যাচারের জবাব দিতে হবে। সেই সঙ্গে আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের প্রত্যেককে সংযত থাকতে হবে। যাতে তাদের বিরুদ্ধে কোন অরাজকতার অভিযোগ না উঠে।
তিনি বলেন, রাজনীতির মূল লক্ষ্যই হচ্ছে, মানুষের কল্যাণ করার, দেশের উন্নয়ন করার, জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করার। যে কাজটি করে যাচ্ছেন আমাদের প্রিয় নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। সেই কাজের অনেক সমালোচনা হচ্ছে। আমাদের যারা বিরোধী আছেন, তারা উন্নয়ন চোখে দেখে না। উন্নয়ন তাদের নজরে পড়ে না। সকালে যখন বিমানবন্দর থেকে সমুদ্রের পাশ মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে আসছিলাম, একটি চমৎকার নয়নাভিরাম রাস্তা হয়েছে। সমুদ্রের পাড় দিয়ে মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরপর পাহাড়ের মধ্য দিয়ে নতুন একটি রাস্তা। এরপর ফ্লাইওভার দিয়ে সরাসরি জিইসি মোড়ে চলে এসেছি। কোথাও ট্রাফিক জ্যামের মধ্যে পড়তে হয়নি। এসবই হয়েছে আমাদের সরকার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সময়েই।
নদীর তলদেশ দিয়ে রাস্তা হবে, এটা দশ বছর আগে কেউ কল্পনাই করতে পারেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটাই আজকের বাস্তবতা। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে মেট্রোরেলের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। নিজস্ব অর্থায়নে আমাদের পদ্মা সেতু হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে একেবারে উল্লেখ করার মতো ডেভেলপমেন্ট। এরপরে আমাদের বিএনপি নেতারা নাকি উন্নয়ন চোখে দেখে না। চোখ থাকতে যারা অন্ধ, তাদের চোখেতো কোন কিছুই পড়বে না। সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা ছাড়া, ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি লুটপাট ছাড়া কিছুই করেনি।
অর্থনীতিতে বাংলাদেশ ভারত থেকে এগিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৬শ ডলার। আজকে আমাদের মাথাপিছু আয় ২১শ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। কিছুদিন আগে আইএমএফ থেকে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক থেকে প্রকাশ করেছে, বাংলাদেশের জিডিপি ভারতকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যে কারণে ভারত সরকারের অনেক সমালোচনা হচ্ছে। অর্থনীতির দিক দিয়ে বাংলাদেশ ভারত সরকারকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আমাদের দেশের অনেকগুলো ইনডেক্সে আমরা ভারত থেকে এগিয়ে গেছি। অন্যদেশগুলো বলছে, উন্নয়ন অগ্রগতিতে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমার দেশের বিরোধীদল উন্নয়ন অগ্রগতি চোখে দেখছে না। বরং এই উন্নয়ন অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য মিথ্যাচার করে সরকারকে বিব্রত করতে চায়। আমাদের কিছু কিছু নেতাকর্মীদের ভুলের কারণেই এই সুযোগটা তারা পাচ্ছে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিককালে কিছু ঘটনায় মানুষের মাঝে ক্ষোভে সৃষ্টি হয়েছিল। যেমন সিলেটের এমসি কলেজের ঘটনা, একজন নারীর শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একটি ঘটনা সারাদেশের মানুষের হৃদয়ের মধ্যে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এই ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করেই সরকারের সমস্ত উন্নয়নকে ম্লান করে দেওয়ার একটি চক্রান্তে লিপ্ত হলো, মিথ্যা প্রচারণা চালানো হলো। এমন প্রচারনা চালানো হলো- সরকারের বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই নাকি সরকারি দলের কিছু লোকজন নারী নির্যাতনের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত। তিনি এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, সিলেটের এমসি কলেজের ঘটনা, বেগমগঞ্জের যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেগুলো প্রত্যেকটা নিন্দনীয়, লজ্জাজনক, দুঃখজনক। এসব ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই সম্পৃক্তদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করেছি। সকলেই গ্রেপ্তার হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দলীয় বিবেচনায় কোন কিছুকে ছাড় দিয়েছেন, তার নজির নেই। যার বিরুদ্ধে যখনই অভিযোগ উঠেছে, তখন তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। সাধারণ কর্মীই হোক, সাংসদপুত্র বা মন্ত্রীপুত্র যে-ই হোক না কেন কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি। তারপরেও আমাদের গায়ে কালিমা লেপনের চেষ্টা করা হচ্ছে। বিএনপি জামাত যারা ক্ষমতায় থাকতে ব্যর্থ ছিল, ক্ষমতার বাইরে থেকেও যারা মিথ্যাচার করে জনগণবিরোধী কাজ করার কারণে যারা জনবিচ্ছিন্ন হয়েছেন তারাই এই মিথ্যাচার করে যাচ্ছে।
একটি জাতীয় পত্রিকার সংবাদ উদ্বৃত করে তিনি বলেন, এক বছরে ৬শ নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা যদি ধরেই নিই ঘটনাগুলো সত্য। যেই ছয় শতাধিক ঘটনাগুলোর মধ্যে কয়টিতেই সরকারি দলের লোকজনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ কিন্তু প্রমাণিত হয়। সেটা পাঁচটা, সাতটা না হয় দশটা। তিনি প্রশ্ন রাখেন, বাকীগুলো কারা ঘটিয়েছে? তিনি বলেন, আমরা পত্রিকায় দেখেছি, নারী নির্যাতনের জন্য অভিযুক্ত হচ্ছেন স্কুলের স্কুলের শিক্ষকসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের বিরুদ্ধে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুই মুসলিম নারী ও এক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাগরিকের বিজয়
পরবর্তী নিবন্ধসাধ্যের সবটুকু দিয়ে রোগীদের সেবা দিন