দেশে বছরে ১০ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হয় : বাপা

পুনর্ব্যবহারযোগ্য শিল্পে উৎসাহ দেওয়া এবং স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে আলাদা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দরকার আইনের কঠোর প্রয়োগ

| রবিবার , ২২ জুন, ২০২৫ at ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে বছরে ৯ লাখ ৭৭ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয়; যা নানাভাবে পরিবেশের ক্ষতি করে থাকে বলে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় উঠে এসেছে। গতকাল শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘প্লাস্টিক পলিথিন দূষণ প্রতিরোধ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ভূমিকম্প সুরক্ষা প্রস্তুতি’ বিষয়ক ওই সভায় এ তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। সেমিনারে প্লাস্টিক ও পলিথিন প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক এম ফিরোজ আহমেদ। লিখিত প্রবন্ধে তিনি বলেন, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পরিবেশের ওপর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৯ লাখ ৭৭ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয়। এগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি সাধন করে থাকে। খবর বিডিনিউজের।

সংগঠনের সভাপতির অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, দেশে পরিবেশ আইন থাকলেও মানার প্রবণতা লক্ষণীয় নয়। বাজারগুলো পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্যে সয়লাব হয়ে গেছে। এর ফলে মাছের পেটে, মানুষের শরীরে ও মায়ের বুকের দুধে প্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। এ থেকে বের হয়ে আসতে হলে সর্বস্তরে সচেতনতা প্রয়োজন। পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার। স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবির বলেন, সরকার ২০০২ সালে পলিথিন উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। কিন্তু পলিথিন ও টিস্যু ব্যাগে বাজার ছেয়ে যাচ্ছে। আইনের নির্মোহ ও কঠোর ব্যবহারের অভাবই এর প্রধান কারণ।

শিল্প ও মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রবন্ধে বাপার যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল ব্যবস্থাপনা বর্তমানে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আমরা একদিকে যেমন দূষণের মধ্যে আছি, অন্যদিকে আমাদের পণ্যগুলোকে দূষণ থেকে রক্ষা করার জন্য প্লাস্টিকে মুড়ে ফেলছি এবং এই মোড়কগুলোর ব্যবস্থাপনায় আমাদের যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে।

তার মতে, তৈরি পোশাক ও চামড়া শিল্প পানি দূষণের অন্যতম মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। চামড়া শিল্পের দূষণ থেকে বুড়িগঙ্গা নদীকে রক্ষা করার জন্য চামড়া কারখানা হাজারীবাগ থেকে ঢাকার সাভারে স্থানান্তর করার পর আরও ব্যাপকভাবে নদীদূষণ শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, মেডিকেল বর্জ্য সমস্যা একদিনেই সমাধান করা সম্ভব। শুধু সঠিক নজরদারির অভাবে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে অনুসরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সভায় ভূমিকম্প ও প্রস্তুতি বিষয়ক প্রবন্ধে বাপার নগরায়ন ও নগর সুশাসন বিষয়ক প্রোগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব পরিকল্পনাবিদ তৌফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশে চলতি ২০২৫ সালে ৫৪টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে, যেগুলোর মাত্রা ৫ থেকে ৬ মধ্যে। এ বছর ২ থেকে ৪ দশমিক ৩এর মধ্যে ৪০টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ঢাকায় ঝুঁকির মাত্রা অনেক বেশি তুলে ধরে তিনি বলেন, একটি ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে প্রায় ৭ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে এবং প্রায় ১৫০ কোটি ডলারের ক্ষতিসাধন হবে। ঢাকা শহরের প্রায় ৯৫ শতাংশ ভবনই অননুমোদিত দাবি করে তিনি বলেন, একটি সাড়ে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে নগরীর প্রায় ৫১ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে।

সভায় প্রতিটি শিল্প কারখানায় বাধ্যতামূলক ইটিপি স্থাপন এবং কার্যকরভাবে পরিচালনা করা, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও প্রক্রিয়া ব্যবহার করে বর্জ্য উৎপাদন কমানো, শিল্প মালিকদের জবাবদিহিতার আওতায় এনে নিয়মিত মনিটরিং করা, শিল্পাঞ্চলভিত্তিক আধুনিক সিইপিটি গড়ে তোলা এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য শিল্পে উৎসাহ দেওয়া এবং স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে আলাদা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

অপরদিকে ভূমিকম্প ও নগর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সিটি কর্পোরেশনের প্রণয়ন করা ভূমিকম্পের আপদকালীন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, ভূমিকম্পজনিত ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ভূমিকম্প ঝুঁকির প্রকৃতি ও মাত্রা চিহ্নিত করার পাশাপাশি সামঞ্জস্য রক্ষা করে আপদকালীন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা, আধুনিক নগর পরিকল্পনা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জিআইএস প্রযুক্তি ব্যবহারসহ বেশ কিছু দাবি তুলে ধরা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধধসে পড়েছে পূর্ব গোভানিয়ার লোহার ব্রিজটি
পরবর্তী নিবন্ধপ্রস্তুত কক্সবাজার পানি শোধনাগার প্রকল্প