১৭তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস আজ। অটিজম বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো.সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটিতে এবারের প্রতিপাদ্য– ‘সচেতনতা–স্বীকৃতি–মূল্যায়ন: শুধু বেঁচে থাকা থেকে সমৃদ্ধির পথে যাত্রা’।
অটিজমে আক্রান্ত শিশু ও বয়স্কদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০০৭ সালে ২ এপ্রিলকে ‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’ হিসেবে পালনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর থেকে প্রতি বছর দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে গতকাল বিকালে সংবাদ সম্মেলন করেছে নিষ্পাপ অটিজম ফাউন্ডেশন। নগরীর প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিষ্পাপ অটিজম ফাউন্ডেশনের সভাপতি শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বাসনা রানী মুহুরী। তিনি বলেন, ইউএস সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী প্রতি ৩৬ জন আমেরিকান শিশুর মধ্যে ১ জনের অটিজম আছে এবং আমাদের দেশে প্রতি ১ হাজারে ১ থেকে ৩ জন শিশু অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। গবেষণায় আরো জানা যায়, মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের অটিজম হয়ে থাকে ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি। সম্মিলিতভাবে যত শিশুর ডায়াবেটিস, এইডস, ক্যান্সার, সেরিব্রাল পালসি, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, মাসকুলার ডিসট্রফি এবং ডাউন সিন্ড্রোম হয়ে থাকে তার চেয়ে অটিজমের সংখ্যাই বেশি। প্রতি বছর আমেরিকায় ২ মিলিয়ন লোকের মাঝে এএসডি (অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার) দেখা যায় এবং সারা বিশ্বে ১০ মিলিয়নের মত লোকের অটিজম হয়ে থাকে। এ ছাড়া আমেরিকায় সরকারী পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, সামপ্রতিক বছরগুলোতে এই অটিজমের বিস্তার বার্ষিক ১০ থেকে ১৭ শতাংশ বেড়েছে। এই বৃদ্ধির নির্ভরযোগ্য কোন কারণ ও ব্যাখ্যা জানা যায়নি।
তিনি আরো বলেন, উন্নত যথাযথ রোগ নির্ণয় প্রক্রিয়ার প্রভাব এবং পরিবেশগত প্রভাব এর জন্য দায়ী বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। চট্টগ্রামে থেরাপিস্ট এবং বিশেষায়িত স্কুলের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এবং পেশাগত সুযোগ–সুবিধা না থাকায় শিক্ষিত ছাত্র–ছাত্রীরা এই বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত না হওয়ায় এ বিষয়ে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতিও হচ্ছে না। প্রতিটি অটিজম শিশুর আচরণ স্বতন্ত্র হওয়ার কারণে তাদের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ভিন্ন। তাই ১:১ বা ক্ষেত্র বিশেষে ১:২ ব্যবস্থায় দ্রুত অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়। বিশেষায়িত শিক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই আমরা অটিজম স্কুল গুলোকে দ্রুত এমপিওভুক্ত করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া ১নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের নন্দিরহাটে ফাউন্ডেশনের নিজস্ব জমিতে স্বপ্নের কমপ্লেঙ মায়াকাননের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য বিত্তবান লোকের আর্থিক সহায়তার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। এ কমপ্লেঙে বৃত্তিমুলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সমন্বিত বিদ্যালয়, ইনক্লুসিভ হোম, প্রফেশনাল ট্রেনিংসহ বিভিন্ন কার্য্যক্রম পরিচালিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফাউন্ডেশনের সহ সভাপতি, মো. রোসাঙ্গীর বাচ্চু, যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক টিংকু চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক–আশুতোষ দে, অধ্যক্ষ সোমা চক্রবর্তী, আরাফাত ইসলাম প্রমুখ।