দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়ে বছরে অন্তত ৭৫ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। প্রতি বছরই বাড়ছে এই চাহিদা। চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি জ্বালানি তেল মজুদের সক্ষমতা বাড়ানোও জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, দেশে জ্বালানি তেলের ব্যবহার বাড়ছে। কৃষি এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি অন্যান্য সেক্টরে জ্বালানি তেল ব্যবহার প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে বর্তমানে বছরে বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৭৫ লাখ টন জ্বালানি তেল ব্যবহৃত হয়। এর ৭০ শতাংশই ডিজেল। অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ পেট্রোল, অকটেন, কেরোসিন, ফার্নেস অয়েল ও জেট ফুয়েল। প্রতি বছর গড়ে ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে জ্বালানি তেলের ব্যবহার।
বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত অবস্থায় জ্বালানি তেল আমদানি করে। দেশের চাহিদার ৯২ শতাংশই আনা হয় আমদানি করে। অবশিষ্ট ৮ শতাংশ পাওয়া যায় স্থানীয় উৎসসমূহ থেকে। বিশেষ করে গ্যাস ক্ষেত্রগুলোয় পাওয়া কনডেনসেট থেকে দেশে পেট্রোলসহ বিভিন্ন জ্বালানি উৎপাদিত হয়ে থাকে।
জ্বালানি তেলের ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে জ্বালানি নিরাপত্তার সক্ষমতার ব্যাপারটি নিয়েও আলোচনা চলছে। যেকোনো দেশের অন্তত ৯০ দিনের জ্বালানি তেলের মজুদ থাকাকে জ্বালানি নিরাপত্তায় সক্ষম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের মজুদ সক্ষমতা এখনো ৪০ দিন পার হতে পারেনি। দেশে বিপিসি নিয়ন্ত্রিত তিনটি তেল বিপণন কোম্পানি পদ্মা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম এবং যমুনা অয়েল কোম্পানির প্রধান ডিপোসহ বিভিন্ন ডিপো ও দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব একমাত্র জ্বালানি তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির ডিপোসমূহে ৩ লাখ টনের মতো জ্বালানি তেল মজুদ করা যায়। ইতোমধ্যে কঙবাজারের মাতারবাড়িতে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) প্রকল্পের আওতায় একলাখ টন ধারণ ক্ষমতার ট্যাংক নির্মাণ করা হয়েছে।
দেশে বর্তমানে ৪ লাখ টনের মতো জ্বালানি তেল মজুদ করা যায়। যা দিয়ে দেশের ৪০ দিনেরও কম সময়ের চাহিদা মোকাবেলা সম্ভব। তেল মজুদের সক্ষমতা আরো ৪ টন বাড়ানোর ব্যাপারে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আলাপ আলোচনা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়ে উঠেনি। জ্বালানি তেল মজুদের সক্ষমতা ঠিকঠাকভাবে উন্নীত না করায় বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে দাম কমার সুফল থেকেও বঞ্চিত হয়ে আসছে। কম দামে তেল কিনে মজুদ করে রাখার মতো সন্তোষজনক অবস্থা বাংলাদেশের নেই বলেও বিপিসির ওই কর্মকর্তা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা প্রতিমাসেই তেল আমদানি করি। যা দিয়ে দেশের চাহিদা মেটানো হয়। দাম পড়ে গেলে বেশি করে কিনে এনে মজুদ করে রাখার মতো অবকাঠামোগত সুযোগ আমাদের নেই।
জ্বালানি তেল মজুদের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরকার চেষ্টা করছে বলে উল্লেখ করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিসির ওই কর্মকর্তা জানান, এটি অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। শুধু দাম কমলে কিনে রাখা নয়, কোনো কারণে যদি আন্তর্জাতিক রুটে জ্বালানি তেল সরবরাহ নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়ে সেক্ষেত্রে দেশের চাহিদা মোকাবেলা করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্যও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার।