দেশে গ্যাস চুরি বন্ধের পদক্ষেপ নিতে হবে

| শুক্রবার , ১০ জুন, ২০২২ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

সারা দেশের মানুষ এখন নানা কারণে দিশাহারা। আছে মূল্যস্ফীতির চাপ, আছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামবৃদ্ধি। বলা যায়, নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের কারণে এমনিতেই সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষের। এরই মধ্যে নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এমন অবস্থায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের কাছে মহাবিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে। আমরা অনেকেই বুঝতে সক্ষম হই না যে, তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে বিভিন্ন অপরিহার্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তা জানা সত্ত্বেও গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের মূল্য গড়ে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে দেশে আরো অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। সিএনজি বাদে সকল শ্রেণির ভোক্তাদের জন্য গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে বিদ্যুতের মূল্যও পরবর্তীকালে বৃদ্ধি করা হবে-এমন ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাধার পর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। চাল, ডাল, তেল, চিনির বাড়তি দামের কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর সঙ্গে সাবান, শ্যাম্পু, সবধরনের বেকারি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি আরও চাপ বাড়াবে। অন্যদিকে পত্রিকান্তরে অর্থনীতিবিদদের প্রতিক্রিয়া ছাপা হয়েছে। তাঁরা বলছেন, বৈশ্বিক কারণে বর্তমানে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এখন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন পণ্যের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। ফলে গ্যাসের এই মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। তাদের মাসিক খরচ কাটছাঁট করতে হবে। তাঁরা বলছেন, বর্তমানে সরকার গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে ভর্তুকি দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারতো। যেহেতু গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে, তাই অদূর ভবিষ্যতে যেন আবার দাম বাড়াতে না হয়ে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সিস্টেম লস কমিয়ে আনতে হবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের নিজস্ব যে গ্যাস রয়েছে, তার বড় একটি অংশ সরকার বিদ্যুৎ ও সার শিল্পে ব্যবহার করে। ফলে আবাসিক ও বেসরকারি খাতে যে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে, সেটা মেটাতে হচ্ছে বেশি দামে আমদানি করা গ্যাস দিয়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম ওঠানামা করার কারণে সরকারকেও সেই আমদানি করা গ্যাসের দাম সমন্বয় করতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতে আবাসিক, যানবাহন ও শিল্পখাতের গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। অন্য এক বিশেষজ্ঞ অভিযোগ করে বলছেন, ‘এখন গ্যাসের দাম বাড়ানো একেবারেই অযৌক্তিক। দেশের ভেতরে যে গ্যাস রয়েছে, সেটা সরকার তোলে না। বরং বিদেশ থেকে আমদানির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। একটা চক্রকে ব্যবসা পাইয়ে দিতে, বিশেষ সুবিধা দিতেই এটা করা হচ্ছে।’ তাঁরা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে জনজীবন যখন দুর্বিষহ তখন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি একেবারেই যৌক্তিক নয়।

অনেকেই বলছেন, সরকারি সংস্থাগুলির সিস্টেম লস, অনিয়ম, অদক্ষতা, অপচয় ও দুর্নীতি দূরীকরণে মনোযোগ না দিয়ে গ্যাসের এই মূল্যবৃদ্ধি অযৌক্তিক ও অন্যায্য। তাঁদের মতে, এটা উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর শামিল। তবে তার চেয়েও বড় কথা হলো, মূল্য বৃদ্ধি করার পরও কি নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে? তাঁরা বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর বাইরে সরকারের উচিত চুরি বন্ধ করা। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যে পরিমাণ গ্যাসের বিল নেওয়া হয়, প্রকৃতপক্ষে তার থেকে কম মূল্যের গ্যাস ব্যবহার হয়। কিন্তু গ্যাস চুরি বন্ধ না করে বারবার গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এতে আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে ভুগতে হচ্ছে।

যে কথা না বললেই নয়, সেটা হলো- গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে সরকারকে সবসময় ভর্তুকি দিতে হয়। তাছাড়া রাষ্ট্রীয়ভাবে জোগান দেওয়া এই সেবা ও সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির ক্ষমতাও সরকারের অবশ্যই আছে। আমাদের একান্ত প্রত্যাশা, মূল্য বৃদ্ধি পেলেও অন্তত শিল্পকারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ যেন নিয়মিত নিরবচ্ছিন্নভাবে পাওয়া যায়। এই বিষয়টি সরকারের নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে