দেশে খেলাপি ঋণ ৩ লাখ কোটি টাকা

| বুধবার , ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ

২০১৯ সালের জুন শেষে দেশের ব্যাংকিংখাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন লাখ কোটি টাকা। ২০০৯ সাল থেকে এই সময় পর্যন্ত প্রতি বছর নয় হাজার ৩৮০ কোটি টাকা করে খেলাপি হয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ ঋণ বর্তমান ব্যাংকিংখাতে অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ। বারবার খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার ‘ব্যাংকিংখাত তদারকি ও খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ : বাংলাদেশ ব্যাংকের সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। গত এক দশকে ব্যাংকিংখাতে চলমান অস্থিরতা ও নৈরাজ্য তথা অনিয়ম-দুর্নীতি, ঋণ জালিয়াতি, খেলাপি ঋণের উচ্চ হার, মূলধনের অপর্যাপ্ততা, উচ্চ সুদের হার, তারল্য সংকট ইত্যাদি বিষয় বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন এবং গণমাধ্যমে বহুলভাবে প্রকাশিত হয়। ব্যাংকিংখাত থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমানতকারী তথা সাধারণ জনগণের অর্থ দীর্ঘদিন ধরেই খেলাপি ঋণের মাধ্যমে আত্মসাৎ হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। খবর বাংলানিউজের।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের শুরুতে দেশের ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। যা সেপ্টেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ উক্ত সময়ে বছরে গড়ে নয় হাজার ৩৮০ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে। এই বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ৪১৭ শতাংশ, যদিও একই সময়ে মোট ঋণ বৃদ্ধির হার ৩১২ শতাংশ। প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণের (১১২,৪২৫ কোটি টাকা) সঙ্গে বারবার পুনর্গঠিত ও পুনঃতফসিলী করা এবং উচ্চ আদালত কর্তৃক স্থগিতাদেশ প্রাপ্ত খেলাপি ঋণ যোগ করে ব্যাংকিংখাতে খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৪০ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। অপর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, আইএমএফের খেলাপি ঋণের এই পরিমাণের সঙ্গে অবলোপন করা খেলাপি ঋণ (৫৪,৪৬৩ কোটি টাকা) যোগ করে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ ঋণ বর্তমান ব্যাংকিংখাতে অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ। বিভিন্ন সময়ে খেলাপি ঋণ হ্রাস এবং ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হলেও তা কার্যকর না করে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বার বার ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ ও পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নির্দেশনায় খেলাপি ঋণের মাত্র দুই শতাংশ ফেরত দিয়ে পুনঃতফসিলীকরণের মাধ্যমে ১০ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়। এভাবে পুনঃতফসিলের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায় না করেই সেপ্টেম্বর ২০১৯ থেকে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ কমিয়ে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ হিসেবে দেখানো হয়। ঋণ খেলাপিদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়া ও খেলাপি ঋণ কম দেখাতে বিবিধ কৌশল অবলম্বন সত্ত্‌েবও ২০২০ সালের জুনে খেলাপি ঋণের পরিমাণ পুনরায় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৯৬ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের কারণে সৃষ্ট মূলধন ঘাটতি মেটাতে ২০১২-১৩ অর্থ বছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থ বছর পর্যন্ত সরকার কর্তৃক ১২ হাজার ৪৭২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়। বাংলাদেশে এই বিপুল পরিমাণে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকিংখাতের স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি কার্যক্রমের ক্ষেত্রে প্রধানত দুই ধরনের সুশাসনের চ্যালেঞ্জ লক্ষ্য করা যায়। এক হচ্ছে বাহ্যিক প্রভাব। যার মধ্যে রয়েছে আইনি সীমাবদ্ধতা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ব্যবসায়িক প্রভাব। আর অপরটি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ। যার মধ্যে রয়েছে তদারকি সক্ষমতায় ঘাটতি, নেতৃত্বের সক্ষমতায় ঘাটতি, বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় ঘাটতি এবং তদারকি কাজে সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতি।
অনুষ্ঠানে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও নির্বাহী ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ড. সুমাইয়া খায়ের উপস্থিত ছিলেন। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবির পরিচালক (গবেষণা ও পলিসি) মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবহু বছর পর বৃদ্ধাশ্রমে দেখা
পরবর্তী নিবন্ধডিজিটাল পর্দা শিশুদের যে ক্ষতি করছে