বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের জন্য কর্তৃপক্ষ অ্যান্টিজেনভিত্তিক র্যাপিড টেস্টের অনুমতি দিয়েছে। গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেছে, গত সপ্তাহে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার দেওয়া হয়েছে।
করোনা শনাক্তে দেশের সব সরকারি হাসপাতাল, সরকারি পিসিআর ল্যাব এবং সব ধরনের হেলথ ইনস্টিটিউটে অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু করা হবে। তবে এই টেস্ট শুরু করতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অভ্যন্তরীণ গাইডলাইন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তাব অনুযায়ী, যেসব রোগীর মধ্যে করোনা সংক্রমণের উপসর্গ রয়েছে তাদেরকে অ্যান্টিজেন টেস্ট করানো হবে। এতে যারা পজিটিভ হিসেবে চিহ্নিত হবেন, তাদেরকে আইসোলেশনে নেওয়া হবে। যাদের ক্ষেত্রে ফলাফল নেগেটিভ আসবে, তাদেরকে পিসিআর টেস্টের জন্য পাঠানো হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা সিডিসির তথ্যমতে, অ্যান্টিজেন টেস্ট মূলত শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এবং শ্বাসযন্ত্রের অন্যান্য ভাইরাস শনাক্তের জন্য ব্যবহার করা হয়। এই টেস্টের মাধ্যমে বিশেষ ভাইরাল অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়, যা ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
এ বিষয়ে ভাইরোলজিস্ট তাহমিনা শারমীন বলেন, পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে ভাইরাসের নিউক্লিয়িক অংশ শনাক্ত করা হয়। অ্যান্টিজেনের মাধ্যমে ভাইরাসের প্রোটিন অংশ শনাক্ত করা হয়।
অ্যান্টিজেন টেস্ট কীভাবে কাজ করে : একজন মানুষ অসুস্থ হলে তার নমুনা সংগ্রহের পর অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়। এক্ষেত্রে নাক বা গলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে দেখা হয়। পিসিআর পদ্ধতিতে অল্প পরিমাণ ভাইরাসও শনাক্ত করা সম্ভব। কিন্তু অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে সেটি সম্ভব নয় বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। এটি ভাইরাসকে অ্যাম্পলিফাই করে না। এই টেস্টের মাধ্যমে শুধু ভাইরাসের উপস্থিতি জানা যায়। অনেক সময় কোনো রোগীর দেহে ভাইরাসের পরিমাণ কম থাকলে অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে তার করোনা পজিটিভ হওয়ার বিষয়টি না-ও জানা যেতে পারে। তাহলে অ্যান্টিজেন টেস্টের সুবিধা কী? অ্যান্টিজেন পরীক্ষার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে দ্রুত এর ফলাফল পাওয়া যায়।
ভাইরোলজিস্ট তাহমিনা শারমীন বলেন, ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে অ্যান্টিজেন টেস্টের ফলাফল পাওয়া সম্ভব। এছাড়া এই টেস্টে কোনো ধরনের প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি দরকার হয় না বলে মাঠ পর্যায়ে এই পরীক্ষা চালানো সম্ভব। র্যাপিড কিটের মতোই এই টেস্ট চালানো সম্ভব।
অসুবিধা কী : সমস্যা হলো, অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শতভাগ নির্ভরযোগ্য নয়। ফলাফল কতটা নির্ভুল হবে তা নির্ভর করে তিনটি বিষয়ের ওপর- কিটের মান, নমুনার মান এবং সংক্রমণের কোন পর্যায়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ কারণে কোভিড-১৯ রোগের লক্ষণ দেখা দিলে কিংবা সংক্রমিত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে এলে তার ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করাতে হবে।