কয়েক মাস ধরে পক্ষে–বিপক্ষে আলোচনা–সমালোচনা শেষে একগুচ্ছ শর্ত বেঁধে দিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশীয় ভাষার চলচ্চিত্র আমদানির অনুমতি দিল সরকার। এর ফলে দেশের হলগুলোয় হিন্দি সিনেমা দেখাতে আর কোনো বাধা থাকছে না।
তবে শর্ত হল, প্রথম বছরে দশটি উপমাহাদেশীয় সিনেমা দেশে আনতে হলে সমান সংখ্যক বাংলাদেশি সিনেমা রপ্তানি করতে হবে। হলে দেখানোর আগে বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেতে হবে। এছাড়া আরও কিছু শর্ত রাখা হয়েছে সিনেমা আনার ক্ষেত্রে। গতকাল মঙ্গলবার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সাইফুল ইসলামের স্বাক্ষরে এ বিষয়ে একটি আদেশ জারি হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
সেখানে বলা হয়, উপমহাদেশীয় ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র আমদানি সংক্রান্ত সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক মতামতের ভিত্তিতে বিদ্যমান আমদানি নীতি আদেশ ২০২১–২০২৪–এর ২৫ (৩৬) (গ) উপ–অনুচ্ছেদের শর্ত প্রতিপালন করে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র রপ্তানির বিপরীতে সাফটা ভুক্ত দেশ থেকে উপমহাদেশীয় ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র আমদানি করার জন্য নিম্নোক্ত শর্ত সাপেক্ষে পরীক্ষামূলকভাবে নির্দেশক্রমে অনুমতি প্রদান করা হল।
শর্ত : বাংলাদেশের বৈধ চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিবেশকগণ উপমহাদেশীয় ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র আমদানি করার সুযোগ পাবেন।
উপমহাদেশীয় ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র বাংলা সাবটাইটেলসহ পরীক্ষামূলকভাবে শুধু দুই বছরের জন্য রপ্তানির বিপরীতে আমদানি করার সুযোগ থাকবে। প্রথম বছর ১০টি বাংলাদেশি চলচ্চিত্র রপ্তানির বিপরীতে সমান সংখ্যক চলচ্চিত্র আমদানি করতে পারবে। আমদানিকৃত উপমহাদেশীয় ভাষার চলচ্চিত্র প্রদর্শনের আগে অবশ্যই বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের সনদ গ্রহণ করতে হবে। এই আদেশ বলে আমদানি করা চলচ্চিত্র বাংলাদেশে ঈদ–উল–ফিতর, ঈদ–উল আযহা ও দূর্গা পুজার সপ্তাহে প্রদর্শন করা যাবে না।
হিন্দি সিনেমা মুক্তির অনুমতি দেওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন সিনেমা হল মালিক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস। তিনি বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তে আমরা আনন্দিত। অনেক দিনের চেষ্টার পর এটি সম্ভব হয়েছে। তবে চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম মনে করছেন, ভারতীয় সিনেমা আমদানির অনুমতির মধ্য দিয়ে দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের সংকটের সমাধান হবে না।
দেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে সুরক্ষা দিতে স্বাধীনতার পর থেকে ভারতীয় সিনেমা আমদানি নিষিদ্ধ। দশককাল আগে একবার সরকার অনুমতি দিলেও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের বিরোধিতার মুখে পিছু হটে। দেশে উপমহাদেশীয় ভাষার সিনেমা আমদানির পক্ষে মত দিয়েছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদও। এবার তথ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ফলে ভারতীয় সিনেমা তথা বলিউড সিনেমা দেশে মুক্তির পথ তৈরি হলো।
‘যেনতেন’ সিনেমা আমদানি করে যেন সিনেমার বাজার নষ্ট না করা হয় তার ব্যাপারে তৎপর থাকার জন্য সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন সিনেমা হল মালিক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস। চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম বলেন, তবে আমি এখনো মনে করি, নিজেদের ভালো সিনেমা বানাতে হবে এবং নিজেদের ভালো সিনেমা প্রদর্শনের ব্যবস্থা জটিলতা মুক্ত করতে হবে।
দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে দেশের সিনেমা দিয়েই দাঁড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেন এই নির্মাতা।