মাঘের শুরুতেই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে বান্দরবন। কয়েক বছরে মধ্যে পার্বত্য এই জেলায় এটাই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। গতকাল বুধবার বান্দরবান আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সনাতন কুমার মণ্ডল জানান, সকাল ৬টায় বান্দরবানে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের যে কয়দিন ধারাবাহিক তাপমাত্রা রেকর্ড আছে তার মধ্যে জেলায় আজকেরটাই সর্বনিম্ন। তার আগে কখনও এর নীচে নামেনি। তবে এর আগে বান্দরবানে সর্বনিম্ন কত তাপমাত্রা ছিল এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, ২০১৪ সাল থেকে বান্দরবান অফিস চালু হলেও আবহাওয়া মূল পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে। তার আগে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কত নিম্নমুখী হয়েছে আমাদের রেকর্ড নেই। হয়ত কোনো সময় আরও নিম্নমুখী তাপমাত্রা হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু আবহাওয়ার মূল পর্যবেক্ষণ চালু হওয়ার পর আমাদের রেকর্ডের মধ্যে বান্দরবানে এটাই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। খবর বিডিনিউজের।
বান্দরবান আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, তবে আবহাওয়ার এই পরিস্থিতি উন্নতি হবে। কুয়াশা কমে আসবে। শীত ও ঠান্ডার তীব্রতা হালকা কমবে। তাপমাত্রাও ধীরে ধীরে বাড়বে। তবে চার–পাঁচ দিন পর আবারও তাপমাত্রা একটু নামবে। আগামীকাল ও ২০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকটি এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু সব জায়গাতে হবে না বলে জানান তিনি।
এদিকে সপ্তাহে রোববার ও বুধবার বান্দরবান শহরে সাপ্তাহিক বাজার বসে। ভোর হলেই দূরদূরান্ত এলাকার লোকজন নিয়ে আসে স্থানীয় উৎপাদিত শাকসবজি। গতকাল দূরদূরান্ত থেকে বাজারে আসা বিক্রেতারা জানান, শীত ও ঠান্ডা উপেক্ষা করে হলেও বাজারে আসতে হয় তাদের। শাক–সবজিগুলো ঠিক সময়ে বিক্রি করতে না পারলে ক্ষেতে নষ্ট হবার সম্ভাবনা আছে।
সাপ্তাহিক বাজারে তারাছা থেকে আসা সামাচিং ও মংশৈচিং মারমা জানান, মালামাল নিয়ে তাদের নৌকায় করে সাঙ্গু নদীপথে আসতে হয়। নৌকায় করে আসলে বাতাসে আরও ঠান্ডা লাগে তাদের। একেবারে জমে যায়। শীত না থাকলে এলাকার লোকজন যার যার কলা, পেঁপে এবং শাক–সবজি নিয়ে একেবারেই ভোরেই চলে আসে। এখন বেশি ঠান্ডার কারণে সবাই ভোরে আসতে পারে না।
শীতে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে পাহাড়ের চূড়ায় বসবাস করা স্থানীয় লোকজন। বিশেষ করে বান্দরবান শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক পাহাড়ে লোকজন ঠান্ডা ও শীতে ভোগান্তিতে রয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কয়েকদিন ধরে চিম্বুক পাহাড়ে বিকাল হলেই ঝিরঝিরে ঠান্ডা বাতাস বইতে থাকে। তখন শীতে ও ঠান্ডাই কাঁপুনি ধরে। অনেক জায়গায় সন্ধ্যা নামতে না নামতেই আগুন জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে হয়।
তাপমাত্রা সর্বনিম্নমুখী এই পাহাড়ি এলাকায় ঠান্ডাজনিত রোগী বাড়ছে জানিয়ে বান্দরবান সদর হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসক এস এম আসাদুল্লাহ বলেন, হাসপাতালে এই কয়েক দিন ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেশি আসছে। বিশেষ করে শিশু–বয়স্করা সর্দি ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে এখানে ভর্তি হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে ঘরে শিশুদের ঠান্ডা যাতে না লাগে এবং একেবারে জরুরি প্রয়োজন না হলে সূর্যের আলো না আসা পর্যন্ত ঘরে থাকার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।