গত বুধবার সন্ধ্যায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণ। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে দেওয়া ভাষণে সিইসি বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। ৩০০ আসনেই কাগজের ব্যালটে ভোট গ্রহণ করা হবে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘাতময় পরিস্থিতি ক্রমশ গভীর হচ্ছে। আওয়ামী লীগ তফসিল ঘোষণায় আনন্দ মিছিল করেছে। অন্যদিকে বিএনপি ও অন্য বিরোধী দলের ডাকে এখন দেশব্যাপী অবরোধ ও হরতাল চলছে। যদিও এতে জনমানুষের তেমন সাড়া নেই। তবে এসব কর্মসূচিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত–সহিংসতা ও গাড়ি পোড়ানোর মতো ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি যদি আরো খারাপের দিকে যায়, তাহলে আমাদেরই ক্ষতি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে কোনোভাবেই যেন রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল না হয়, সেদিকে সবাইকে নজর দিতে হবে। কারণ সবার আগে দেশের স্থিতিশীলতা। দেশের স্বার্থে দশের স্বার্থে দেশের বড়দলগুলোকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে দেশের বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংলাপের আয়োজন করা হতে পারে। কারণ দিনকে দিন দুই দলের কর্মসূচিকে ঘিরে মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। যদিও দুই দলের পক্ষ থেকেই জনগণের কল্যাণে কর্মসূচি পালন করা হয় বলে বার্তা দেওয়া হয়। বিএনপি বলছে, তারা দেশের মানুষের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক মুক্তির লক্ষ্যে আন্দোলন করছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপি যেন রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অরাজকতা করতে না পারে– সেজন্য তারাও রাজপথে সোচ্চার রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ে ধ্বংসের মুখে দেশের অর্থনীতি। অবরোধ–হরতালের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি কার্যকারিতা হারিয়ে এখন ভীতিকর একটি ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। আগে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মানুষের সাড়া পাওয়া যেত। এখন রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। চলমান রাজনৈতিক কর্মসূচি শুধু বাংলাদেশের জন্যই যে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির কারণ হচ্ছে তা নয়, বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছেও নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। যানবাহনে হামলা, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া, পণ্য পরিবহনে বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা দেশের অভ্যন্তরে স্বাভাবিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরে না। বাংলাদেশের গত কয়েক বছরের অর্জন মুছে যেতে বসেছে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে। শিল্প–কারখানার উৎপাদন কমে গেছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগ ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র মতে, চলমান রাজনৈতিক সহিংস কর্মকাণ্ডের ফলে দেশের ব্যবসা–বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ছে। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেছেন, কয়েক বছর ধরে দেশে অত্যন্ত স্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করেছে, যা ব্যবসা–বাণিজ্য ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত জরুরি। দেশের ব্যবসায়ী মহল মনে করে রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংস কর্মকাণ্ডের ফলে দেশের ব্যবসা–বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ছে। একই সঙ্গে তৈরি পোশাক খাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনীতিকে শঙ্কার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত স্থিতিশীল পরিবেশ। উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে কঠোর পরিশ্রম ও সততার সঙ্গে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তাঁরা বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, দেশ আজ উন্নয়নশীল পর্যায় থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের দ্বারপ্রান্তে। দেশের এই ধারাবাহিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখা জরুরী। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তা অর্জনে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থিতিশীলতা জরুরি। তাঁরা বলেন, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা ও সংঘাত–সহিংসতা পরিহারের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো বিকল্প নেই।