দেশের মধ্যে নিশ্চয়তা ও স্থিতিশীলতা আনতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ২১ নভেম্বর, ২০২৪ at ১০:২১ পূর্বাহ্ণ

আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডিস রেটিংস বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি ঋণমান আবার কমিয়েছে। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতির পূর্বাভাসে পরিবর্তন এনেছে। গত সাড়ে পাঁচ মাসের মাথায় মুডিস আবার বাংলাদেশের ঋণ মানের রেটিংস কমালো এবং অর্থনৈতিক পূর্বাভাস স্থিতিশীল থেকে ঋণাত্মক করেছে। এর আগে গত ৩১ মে মুডিস বাংলাদেশের ঋণমান এক দফা কমিয়েছিল। মুডিস বলেছে, গত পাঁচ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ঋণমান ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আরও এক ধাপ নেতিবাচক পূর্বাভাস দিল। সোমবার সিঙ্গাপুর থেকে মুডিসের প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এর আগে গত ৩১ মার্চে মুডিসের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল বলে মন্তব্য করেছিল। সাড়ে পাঁচ মাস পর সংস্থাটি সার্বিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল অবনমন করে ঋণাত্মক হিসাবে চিহ্নিত করেছে মুডিস। পাশাপাশি সরকারের ঋণ মানের রেটিংস ‘বি১’ থেকে হ্রাস করে ‘বি২’তে নামিয়ে আনা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বল্পমেয়াদি ইস্যুয়ার রেটিংস নট প্রাইম গুণসম্পন্ন নয় হিসাবেও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। গত পাঁচ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সামপ্রতিক পরিস্থিতির কারণে ঋণমান ও অর্থনৈতিক পূর্বাভাস হ্রাস করেছে মুডিস।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রধান তিনটি ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি হচ্ছে মুডিস। গত ৩১ মে প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষ বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়েছিল। সেবার তারা ঋণমান এক ধাপ কমিয়ে বিএ৩ থেকে বি১ এ নামিয়ে এনেছিল। এর কারণ হিসেবে ওই সময়ে মুডিস জানিয়েছিল, বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে উচ্চমাত্রার দুর্বলতা ও তারল্যের ঝুঁকি রয়েছে। যে কারণে সংস্থাটি ঋণমান কমিয়ে ছিল। মুডিস বলেছে, বাংলাদেশের ঋণমান হ্রাস করার জন্য মূলত দেশটিতে বর্তমানে সৃষ্ট রাজনৈতিক ঝুঁকি বৃদ্ধি ও নিম্ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে হয়েছে। সামপ্রতিক সময়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা থেকে এ বিষয়গুলোকে প্রধান্য দিয়ে মুডিস রেটিংস তৈরি করেছে। ইতোমধ্যে দেশটিতে একটি সরকারের পরিবর্তন ঘটেছে। এসব বিষয় সরকারের নগদ অর্থ প্রবাহের ঝুঁকি, বৈদেশিক খাতে দুর্বলতা ও ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশকে ঘাটতি পূরণে আরও বেশি স্বল্পমেয়াদি ঋণের ওপর নির্ভরশীল করে তুলবে। সম্পদের গুণগত মানের ঝুঁকির কারণে ব্যাংকিং ব্যবস্থার পুঁজি ও তারল্যসংক্রান্ত দুর্বলতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে রাষ্ট্রের দায়সংক্রান্ত ঝুঁকিও বেড়েছে। এসব ঝুঁকি আগামীতে অর্থনীতিকে সংকটে ফেলে দেবে।

বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে। যেহেতু দেশের অর্থনীতিই প্রধান, সেহেতু একে কীভাবে সমৃদ্ধ করা যায়, তার পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অতি সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সভা শেষে কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, দেশের চলমান অর্থনৈতিক ভঙ্গুর অবস্থা ও সংকটের মূলে রয়েছে স্বেচ্ছাচারী রাজনীতি ও অনাচারী অর্থনীতি। তিনি বলেন, আপনারা শুনেছেন সবাই বলেছে রাজনৈতিক সংস্কার ঠিক না হলে, আমাদের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, কর্মদক্ষতা এবং সুশাসনের পথে বাধা সৃষ্টি হবে। আমরা বর্তমান যে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছি, ভবিষ্যতেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হবে তা নির্ধারণ করবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তাদের কতটা স্বস্তি দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এ মুহূর্তে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ইতিবাচক সংস্কার পদ্ধতি ও কার্যক্রম আমরা লক্ষ্য করছি।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ। বলা যায়, অর্থনীতি এখন বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছে। এতে ঝুঁকি বাড়ছে। এক ধরনের অনিশ্চয়তা জেঁকে বসেছে সবার মধ্যে। সাধারণ চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, দিনমজুর থেকে শুরু করে দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ, অর্থনীতিবিদ সবাই এক ধরনের উদ্বেগউৎকণ্ঠার মধ্যে সময় পার করছেন এখন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক ও নির্বাচনী সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক সংস্কারেও মনোযোগ দিতে হবে। দেশের মধ্যে নিশ্চয়তা ও স্থিতিশীলতা আনতে হবে। আমাদের নিজেদের ব্যর্থতা যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে না বইতে হয়, তা নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রতিটা মুহূর্তে জবাবদিহি না থাকলে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে