পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক তথ্যে জানা যায়, ‘বাংলাদেশে যখন ফেনসিডিলের ব্যবহার বেড়ে গিয়েছিল, সীমান্তসংলগ্ন ভারতীয় এলাকায় তখন নতুন নতুন ফেনসিডিল কারখানা গড়ে উঠেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের ভেতরে ফেনসিডিল ব্যবহার কমে গেলে সেসব কারখানাও বন্ধ হয়ে যায়। ফেনসিডিল আসত ভারত থেকে, এখন ফেনসিডিলের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি ক্ষতিকর মাদক আসছে মিয়ানমার থেকে। যাঁরা মাদকের ব্যবসা করেন, তাঁরা নতুন নতুন মাদকের চালান দেশে নিয়ে আসেন। ২০১৭ সালে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আসার পর মাদকের চোরাচালানও বেড়েছে। এর বিরুদ্ধে সরকারের কথিত বন্দুকযুদ্ধ ও সর্বাত্মক অভিযানও পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারেনি। সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত (সেটি হোক কোস্টগার্ড কিংবা বিজিবি), দায়িত্ব পালনে তাদের কোথাও ঘাটতি বা অবহেলা আছে, নয়তো কোটি কোটি টাকার মাদক দেশের ভেতরে ঢুকতে পারত না। আর মাদক একবার দেশের ভেতরে ঢুকলে সেটি কোনো না কোনোভাবে ক্রেতা বা ভোক্তার কাছে যাবেই।’
ফেনসিডিলের পর বেশি আসত ইয়াবা। এখন আইস ইয়াবার স্থান দখল করে নিচ্ছে। আইসের বিশাল নেটওয়ার্ক এখন বাংলাদেশে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইয়াবার চেয়েও কয়েকগুণ ক্ষতিকর হলো আইস। মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন কৌশলে ঢুকছে মাদকটি। আইস চোরাচালানের সব পথ এখনই বন্ধ করতে না পারলে ইয়াবার মতো এটিও ছড়িয়ে পড়বে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ইয়াবা বা আইস নিয়ে প্রচুর প্রতিবেদন ও একাধিকবার সম্পাদকীয় লেখা হয়েছে দৈনিক আজাদীতে। গত ১৮ মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের ডিলারের কাছে ‘মানুষ বন্ধক’ রেখে বাংলাদেশে ইয়াবা আনা এক ‘মাদক কারবারি’কে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এ সময় তার এক সহযোগিকে গ্রেপ্তার ও ৪০ হাজার ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে কক্সবাজার ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও ইউনিয়নের আল মাছিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার মসজিদের সামনের রাস্তা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন র্যাব–১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক। তিনি জানান, গত ১৫ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জসিম নামক একজন বাংলাদেশিকে মিয়ানমারের ইয়াবা ডিলারদের নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে ভুক্তভোগী জসিম নিজেই জানায়, টেকনাফ হাজম পাড়ার জকির তাকে কৌশলে মিয়ানমারের ইয়াবা ডিলারের নিকট বন্ধক রেখে ২৫ লাখ টাকার ইয়াবা নিয়ে গেছে। কিন্তু টাকা পরিশোধ না করায় ইয়াবা ডিলাররা তাকে শারীরিক নির্যাতন করছে। ভিডিওটি দৃষ্টিগোচর হলে র্যাব–১৫ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধিসহ অভিযান অব্যাহত রাখে। তবে ভিডিওটি প্রকাশের পরেই সংশ্লিষ্ট মাদক কারবারীরা আত্মগোপনে চলে যায় বলে জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, মিয়ানমার থেকে আগে নাফ নদী হয়ে সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে আইস ঢুকলেও এখন আরও কয়েকটি নতুন রুট হয়েছে। ইয়াবার পরবর্তীতে দেশটি আইসের দিকে ঝুঁকছে। শুধু যে তারা টেকনাফ দিয়ে আমাদের দেশে পাঠাচ্ছে তা নয়, কারণ আমাদের দেশে যে চাহিদা আছে এ জন্য বিকল্প রুট তারা করেছে। তাদের (মিয়ানমার) সঙ্গে ভারতের মিজোরাম রাজ্যের লিংক আছে। মিজোরাম থেকে ত্রিপুরা আসছে ল্যান্ড বর্ডার হয়ে সহজে বাংলাদেশে ঢুকছে।
তাঁরা আরও বলেন, আইসের প্রধান কাঁচামাল তৈরি হয় ভারত ও চীনে। মিয়ানমারের কাছে এসব কাঁচামাল বিক্রিতে আরও সতর্ক হলে দেশটিতে আইসের উৎপাদন অনেকটাই কমে যাবে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এখনই এ মাদকটির চোরাচালান রোধ করতে না পারলে ইয়াবার মতো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিষয়টি নিয়ে শূন্য সহনশীলতার কথা বলেছেন, সেটি অনুসরণ করে যদি দায়িত্বপ্রাপ্তরা কাজ করতেন তা হলে অনেকটাই সুফল পাওয়া যেত।
এ কথা বলা বাহুল্য যে, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক জীবনে সংকট তৈরি করেছে। এনেছে বিপদ–বার্তা। ঠিক তেমনি এই মাদক তৈরি করেছে ভয়াবহ সংকট। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে যে আমাদের স্থলসীমান্ত আছে, সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। দেশকে মাদকের থাবা থেকে মুক্তি পেতে হলে দেশের ভেতরে মাদক আসা বন্ধ করতেই হবে।