দেশের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদনে উদ্যোগী হতে হবে

| বুধবার , ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রপ্তানি পণ্যের বাজার সমপ্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, বাজার সমপ্রসারণের পাশাপাশি পণ্যের উৎপাদনও বহুমুখী করতে হবে। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এঙপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রপ্তানি বাড়াতে পণ্যের বহুমুখীকরণের পাশাপাশি বাজার সমপ্রসারণ করতে হবে। এ সময় উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের বিশেষ মনোযোগ দেওয়ারও আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি কে এম শাখাওয়াত মুন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বৈঠকে বিজিএমইএ প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীকে ব্যবসাবাণিজ্য, রপ্তানি ও সামপ্রতিক বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন। তারা বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে সৃষ্ট কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন ও যত দ্রুত সম্ভব তা সমাধানের আশ্বাস দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোপূর্বে বৈদেশিক আয় বাড়াতে তৈরি পোশাকের মতো পাট ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য এবং হস্তশিল্পসহ অন্যান্য রপ্তানি পণ্যে একই গুরুত্ব দিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের আরও নতুন পণ্য উৎপাদন এবং নতুন বাজার (রপ্তানির জন্য) অন্বেষণে মনোযোগ দিতে হবে। আমরা বর্তমানে রপ্তানির জন্য কয়েকটি পণ্যের ওপর নির্ভর করি। রপ্তানির জন্য একটি বা দুটি পণ্যের ওপর নির্ভর করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কারণ অনেক প্রতিবন্ধকতার মোকাবেলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সম্প্রতি রাজধানীর উপকণ্ঠে পূর্বাচল নিউ টাউনে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশচীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে মাসব্যাপী ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ) ২০২৪এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে তিনি হস্তশিল্পকে বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন। নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখায় এ খাতে বিশেষ নজর দিতে হস্তশিল্পকে বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছি সেখানে আমরা লক্ষ্য স্থির করেছি ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের রপ্তানি আয় বাড়াব ১৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। যদিও এক্ষেত্রে সময় খুব কম, কিন্তু আমাদের নতুন নতুন বাজার ধরতে হবে। আর একটা লক্ষ্য স্থির থাকলে যে কোনো অর্জন সম্ভব হয়। আমরা সেভাবেই কাজ করতে চাই।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ নানা ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করেছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অভূতপূর্ব অর্জন সাধিত হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তা, সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনীর পরিচয় রেখেছি। পরিবেশ সংরক্ষণ, নারীর ক্ষমতায়ন, অলাভজনক উন্নয়ন উদ্যোগ বিশেষ করে ক্ষুদ্রঋণ, গ্রামীণ অনানুষ্ঠানিক খাতের বিকাশের ক্ষেত্রে আমাদের সামাজিক উদ্যোক্তরা যথেষ্ট সাফল্য দেখিয়েছেন। সামপ্রতিক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরামর্শক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘প্রাইজ ওয়াটার হাউস’ এর মতে আগামী ২০৫০ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দেবে ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চীনএর মতো দেশগুলো। এছাড়া সম্ভাব্য নেতৃস্থানীয় দেশের তালিকায় প্রণয়ন করা হয়েছে, যারা ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে সবচেয়ে প্রভাবশালী অর্থনৈতিক অঞ্চল বলে পরিণত হবে। এই তালিকায় বাংলাদেশের নামও আছে।

আমাদের রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এখন দরকার হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ হাজার কোটি ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা। ১০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হলে সেটা খুবই সম্ভব। তার আগে চারটি কাজ করতে হবে বাংলাদেশকে। পণ্য বহুমুখীকরণ, বাজার বহুমুখীকরণ, প্রযুক্তি বহুমুখীকরণ, বিনিয়োগ বহুমুখীকরণ। পণ্য বহুমুখীকরণে সবার আগে পোশাকের বাইরে পাট, চামড়া, সিরামিক ইত্যাদি খাতে গুরুত্ব দিতে হবে।

বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে তৈরি পোশাক থেকে। এরপরেই রয়েছে হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়া জাত পণ্য, ওষুধ, বাইসাইকেল, প্লাস্টিক পণ্য, কৃষিপণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য ইত্যাদি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের বেশিরভাগটাই নির্ভর করে বড় যে দুটি বাজার রয়েছে, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা, সেখানকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপরে। সামপ্রতিক যে বিশ্ব মন্দার যে প্রভাব ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে তা হয়তো আরও গভীর হবে। তাঁরা বলেছেন, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে রপ্তানি ঝুড়িতে শুধু একটি পণ্যের আধিপত্য। একটি পণ্য দিয়ে বাজার সমপ্রসারণ করা বেশ কঠিন। চীন, ভারতসহ প্রতিশ্রুতিশীল বাজারে প্রবেশের জন্য এসব দেশের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদনে উদ্যোগ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে