দেশের ক্রীড়া ফেডারেশনে চাটগাঁইয়া সাধারণ সম্পাদক

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শনিবার , ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ

দেশের ক্রীড়া ফেডারেশন গুলোর শীর্ষ পদে বরাবরই ঢাকা কিংবা যারা ঢাকায় থাকে তাদের আধিপত্য থাকে। চট্টগ্রাম কিংবা অন্যান্য শহর গুলোর লোকজনের কপালে বড়জোর একটা সদস্য পদ জুটে। যদিও দেশের বেশ কিছু ক্রীড়া ফেডারেশনের সভাপতি পদে সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা কিংবা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অথচ এক সময় ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি এবং কর্নেল (অবঃ) অলি আহমদ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। মাঝখানে দীর্ঘ সময় বিভিন্ন ফেডারেশনে চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকদের সদস্য কিংবা বড়জোর যুগ্ম সম্পাদক পদ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হতো। তবে গত কয় বছরে সে ধারায় পরিবর্তন এসেছে। এখন দেশের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়া ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকরা। বিশেষ করে দাবা ফেডারেশন, হকি ফেডারেশন, সাইক্লিং ফেডারেশন এবং প্যারা অলিম্পিকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন চট্টগ্রামের চার ক্রীড়া সংগঠক। এছাড়া তায়কোয়ান্ডো ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন কক্সবাজারের মাহমুদুল ইসলাম রানা এবং কারাতে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন বান্দরবানের কৈ শে হ্লা।
এই ছয় জনের মধ্যে প্রথম চট্টগ্রামের কোন ক্রীড়া সংগঠক কোন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম। ২০১৬ সালের এপ্রিলে তিনি দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব লাভ করে। যদিও এর আগে তিনি ২০১২ সালে ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। ২০১৬ সালে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২০ সালে মেয়াদ শেষ হলে গঠন করা হয় এডহক কমিটি। সে কমিটিরও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান শামীম। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন শামীম চট্টগ্রাম মোহামেডানের সাধারণ সম্পাদক। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনেও নানা সময় একাধিক দায়িত্ব পালন করেন। দেশের বরেন্য একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন শামীম। দাবার বিশ্ব সংস্থা ফিদের এশিয়া জোনের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
চট্টগ্রাম মোহামেডানের আরেক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউসুফ বর্তমানে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে। সে নির্বাচনে তিনি যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখনকার সাধারণ সম্পাদক খাজা রহমতউল্লাহ মারা গেলে দায়িত্ব পড়ে মোহাম্মদ ইউসুফের কাধে। এর আগে প্রায় ১২ বছর নির্বাহি সদস্য ছিলেন তিনি হকি ফেডারেশনে। তার নেতৃত্বে প্রায় তিন বছর পর প্রিমিয়ার হকি লিগ মাঠে গড়াবে আর কদিন পরেই। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহি সদস্য মোহাম্মদ ইউসুফ দায়িত্ব পালন করেছেন ফুটবল সম্পাদক এবং হকি সম্পাদক হিসেবেও। সাবেক হকি খেলোয়াড় মোহাম্মদ ইউসুফ জেলা পুটবল এসোসিয়েশনেরও নির্বাহি সদস্য।
সাবেক ফুটবলার এবং চট্টগ্রাম আবাহনীর পরিচালক তাহের উল আলম স্বপন এখন সাইক্লিং ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক। এ বছরের জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি চার বছরের জন্য সাইক্লিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর আগে অবশ্য ২০২০ সালের অক্টোবরে গঠিত এডহক কিমিটিতেও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। পরে নির্বাচনের মাধ্যমে এলেন এই পদে। তিনি চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক এবং জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সহ সভাপতিরও দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি সাউথ এশিয়ান সাইক্লিং কনফেডারেশনেরও সহ সভাপতি। খেলোয়াড়ী জীবনে দারুণ সফল তাহের উল আলম স্বপন এবার সংগঠক হিসেবেও সফল হতে চান।
প্যারা অলিম্পিক নামক একটি ফেডারেশন বিশ্বময় থাকলেও বাংলাদেশেও বেশ সফল এই ফেডারেশন। সে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকও একজন চট্টগ্রামের। ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মাকসুদুর রহমান। সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের অধীনে পাবলিক লাইব্রেরির ডিডি তিনি। ১৯ ইভেন্টের এই ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি ২০০৪ সাল থেকে। তিনি বাংলাদেশে ক্যারম ফেডারেশনের ফাউন্ডার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দায়িত্ব পালন করেছেন ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। একজন সাবেক জুড়ো খেলোয়াড় সন্দ্বীপের বাসিন্দা। ১৯৮৫ সালে জুড়োতে ছিলেন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। ৮৬ সালে জাপান কাপে হয়েছিলেন রানার্স আপ। খেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড কাপেও। একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও দেশের ক্রীড়া ফেডারেশনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন মাকসুদুর রহমান।
তায়কোয়ান্ডো ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন কক্সবাজারের সন্তান মাহমুদুল ইসলাম রানা। প্রায় ২৬ বছর ধরে তিনি এই ফেডারেশনের দায়িত্বে আছেন। ১৯৯৫ সালে তায়কোয়ান্ডো এসোসিয়েশন থাকাকালে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন তিনি। এরপর ১৯৯৭ সালে তায়কোয়ান্ডো ফেডারেশন হলে সেই থেকে আজ পর্যন্ত আছেন সাবেক কারাতে এবং পরবর্তীতে তায়কোয়ান্ডো খেলোয়াড় মাহমুদুল ইসলাম রানা। তার সময়কালে তায়কোয়ান্ডো প্রায় শতাধিক স্বর্ণ পদক জয় করেছে বলে জানান তিনি। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া থেকে যেমন পদক এনেছেন তেমনি দক্ষিণ এশিয়ান গেমস থেকেও পদক এনেছে তার ফেডারেশন। জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত এই ক্রীড়া সংগঠক সামনে আরো বহুদুর পাড়ি দিতে চান। বান্দরবানের সন্তান ক্য শৈ হ্লা কারাতের ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। ২০১৯ সাল থেকে তিনি এই ফেডারেশনের দায়িত্বে আছেন। তিনি এই ফেডারেশনের সব সভাপতিও ছিলেন। ১৯৭৩ সালে তিনি যখন কারাতে খেলা শুরু করেন তখন আজকের মত এত নিয়ম কানুন ছিলনা। তবে ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি কোচিংয়ে জড়িয়ে যান। তবে দেশে কারাতে এখন বেশ এগিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে তিনটি স্বর্ণ সহ প্রায় ১৯ টি পদক জিতেছে এরই মধ্যে কারাতে। আগামীতে কারাতেকে আরো উপরে দেখতে চান জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত এই কারাতেকার এবং ক্রীড়া সংগঠক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএভারেস্ট লিগে খেলতে নেপালে তামিম
পরবর্তী নিবন্ধযুক্তরাষ্ট্রে সুপারমার্কেটে বন্দুকধারীর গুলি নিহত ১, আহত ১২