দেশের অর্থনীতি বড় রকমের চ্যালেঞ্জে পড়ার আশঙ্কা

| মঙ্গলবার , ১৩ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:৪১ পূর্বাহ্ণ

বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নেওয়ায় সরকার যে ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে তাঁরা উদ্বিগ্ন। এদিকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ কমাতে সাতদিনের ‘লকডাউন’ তেমন কার্যকর হবে না। জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কঠোর হতে হবে। উল্লেখ্য যে, আগামীকাল ১৪ এপ্রিল থেকে সাত দিনের ‘কঠোর লকডাউনের’ পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এসময় জরুরি সেবার প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব অফিস বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
পত্রিকান্তরে অর্থনীতিবিদদের মতামত প্রকাশিত হয়েছে। তাঁরা বলছেন, লকডাউনে আদৌ সুফল মিলবে কি না, সেটা প্রধান ইস্যু। এ ছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে পূর্ব অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগিয়ে সুফল পাওয়াটাও চ্যালেঞ্জিং।
তাঁরা বলেন, এবার দুটি প্রধান চ্যালেঞ্জ রয়েছে। লকডাউনের পূর্ব অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। মানুষ লকডাউন সেভাবে মেনে চলেনি। এ জন্য এবার করোনার বিস্তার ঠেকাতে লকডাউন আদৌ কাজে আসবে কি না, সেটা বিবেচনা করতে হবে। কারণ শুধু লকডাউন দিলেই হবে না স্বাস্থ্যবিধি ও সেবা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে দিন আনে দিন খায় বা দিন এনে মাস খায়, এমন ব্যক্তিদের জন্য সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে। গত বছর দরিদ্র মানুষের জন্য নেওয়া পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা যায়নি। পূর্ব অভিজ্ঞতা ও সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। তাহলে এবার সেগুলো ভালোভাবে অ্যাপ্লাই করা উচিত। ‘লকডাউন’ সফল করতে হলে এগুলো নিশ্চিত করতেই হবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থনীতির তিনটি বড় খাত হচ্ছে কৃষি, শিল্প ও সেবা। প্রতিটি খাতের কয়েকটি উপখাত আছে। কৃষির প্রধান উপখাতগুলো হলো শস্য উৎপাদন, প্রাণী ও মৎস্য সম্পদ। স্বল্প মেয়াদে এসব উপখাতে উৎপাদন না কমলেও দেশি-বিদেশি অর্থনীতি অবরুদ্ধ থাকার কারণে এসব উপখাতের উৎপাদিত দ্রব্যের মূল্যের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। এ জন্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা জরুরি। অন্যদিকে দরিদ্র মানুষকে সহায়তা দিতে শহর ও গ্রামে গত বছর যেসব কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল, তারও সঠিক প্রয়োগ জরুরি।
দেশের একটি বড় অংশ মধ্যবিত্ত, যারা মাসের বেতনের ওপর ভর করে চলেন। লকডাউনে মধ্যবিত্তদের অবস্থা খুবই খারাপ। লকডাউন দীর্ঘ হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত, দোকানি, হকার, রিকশাচালক ও স্বল্প আয়ের মানুষেরা বড় সমস্যায় পড়বেন বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলছেন, করোনা ঠেকাতে আরও আগে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন ছিল। তাহলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না। এখনই স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সরকারকে কঠোর হতে হবে। পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ লকডাউনের পরিবর্তে স্মার্ট লকডাউনের দিকে যেতে হবে। এতে অর্থনীতি ধরে রাখা যাবে, মানুষের মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও কমবে। আর দোকান মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, এবার দোকান বন্ধ রাখতে হলে পথে বসা ছাড়া কোনো পথ থাকবে না। উদ্যোক্তারা মনে করেন, ‘লকডাউনের’ নামে জীবন বাঁচাতে জীবিকা নষ্ট হচ্ছে। জীবিকা না চললে জীবন চলবে কিভাবে? যাদের বেসরকারি চাকরি তাদেরও তো সংসার করতে হয়। জীবন-জীবিকা বাঁচাতে সমন্বয় দরকার। লকডাউন আমাদের জন্য গজবের মতো বিষয়।
এ ছাড়া করোনার প্রাদুর্ভাবে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। অনেকেরই আয়ের পথ বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এমন পরিস্থিতিতে জীবন জীবিকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় শ্রমজীবী মানুষ। সর্বাত্মক লকডাউনকে ‘গরিবের পেটে লাথি’ হিসেবে দেখছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে, দিনমজুররাও পড়েছেন বিপাকে। কাজ নেই। তাই বন্ধ উপক্রম আয়ের পথ। মহামারির কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ায়, দীর্ঘ হচ্ছে হতাশা। তাই সরকারের কাছে সহযোগিতা চান হতদরিদ্র মানুষগুলো।
আসলে কঠোর লকডাউন দেওয়া হলে বেশ কিছু প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়ায় বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, গত বছর থেকে অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। প্রস্তুতি না নিয়ে লকডাউনে গেলে গত বছরের অর্থনৈতিক ধীরগতির প্রভাবে দুর্বল অর্থনীতি বড় রকমের চ্যালেঞ্জে পড়বে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে