সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য অতি ঝুঁকিপূর্ণ ২১টি এলাকা রয়েছে। যার তিনটিই চট্টগ্রামে। এগুলো হচ্ছে –মীরসরাই, সীতাকুণ্ড ও পটিয়া উপজেলা। এই তিন উপজেলায় গত পাঁচ বছরে (২০২০–২০২৪) ৭৫৬ টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬৫৩ জন। এর বাইরে একইসময়ে চট্টগ্রাম শহরে ১৮৮ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৪২ জন।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের গবেষণায় এ তথ্য উঠে আসে। সারা দেশে সংঘটিত মোট ৩৭ হাজার সড়ক দুর্ঘটনার উপর ভিত্তি করে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। এখানো আনুষ্ঠানিকভাবে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। তবে কয়েক দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলে আজাদীকে জানিয়েছেন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ বছরে সংঘটিত ৩৭ হাজার দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেশে ১৭৫ টি দুর্ঘটনাপ্রবণ এবং ১৩৯ টি অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়। দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম শহর ছাড়াও পটিয়া, হাটহাজারী, লোহাগড়া, মীরসরাই, রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান রয়েছে। এছাড়া অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলোর মধ্য থেকে ২১টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের তিনটি হচ্ছে চট্টগ্রামের। দুর্ঘটনার জন্য চট্টগ্রামের অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে মীরসরাইয়ে ২৯০ দুর্ঘটনায় ৩০৭ জন, সীতাকুণ্ডে ২৭৭ দুর্ঘটনায় ১৯৫ জন এবং পটিয়ায় ১৮৯ দুর্ঘটনায় ১৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে গত মাসে (আগস্ট) সারা দেশে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য গতকাল সোমবার প্রকাশ করেছে সেফটি ফাউন্ডেশন। এতে বলা হয়, গত মাসে (আগস্ট) দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ২১ দশমিক ২৮ শতাংশ সংঘটিত হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এক নম্বরে ছিল ঢাকা বিভাগ। ঢাকায় দেশের মোট দুর্ঘটনার ২৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ সংঘটিত হয়েছে। এছাড়া গত মাসে (আগস্ট) সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৩ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রাণহানি হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। যা ঢাকায় ছিল ২৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান আজাদীকে বলেন, আগস্ট মাসে চট্টগ্রাম জেলায় ২৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারান ৩০ জন। তিনি জানান, গত আগস্ট মাসে দেশে ৪৫১ সড়ক দুর্ঘটনায় ৪২৮ জন নিহত এবং ৭৯১ জন আহত হন। নিহতের মধ্যে ৬৮ জন নারী ও ৩৪ জন শিশু আছে। দুর্ঘটনায় ৮৩ জন পথচারী মারা যান, যা মোট মৃত্যুর ১৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। একইসময়ে ৩৭টি রেল ট্র্যাক দুর্ঘটনায় ৩১ জন নিহত এবং ১১ জন আহত হয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন তাদের প্রতিবেদনে জানায়, অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে অতিরিক্ত গতির কারণে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। এই গতি নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারী এবং চালকদের মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ দরকার। যানবাহনের বেপরোয়া গতি এবং পথচারীদের অসচেতনতার কারণে পথচারী নিহতের ঘটনা বাড়ছে। এজন্য সরকারি উদ্যোগে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে জীবনমুখি সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। পেশাগত সুযোগ–সুবিধা বিশেষ করে, নিয়োগপত্র, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকার যানবাহনের অধিকাংশ চালক শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ। তারা সবসময় অস্বাভাবিক আচরণ করেন এবং বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালান। ফলে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হন।
চট্টগ্রামে বেড়েছে দুর্ঘটনা : সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতিও। তাদের মনিটরিং সেলের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জুলাই মাসের তুলনায় আগস্ট মাসে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে চট্টগ্রামে। আগস্ট মাসে চট্টগ্রাম বিভাগে ১১৬ সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। যা জুলাই মাসে ছিল ১১৩। এছাড়া জুলাই মাসে সংঘটিত দুর্ঘটনায় ১০০ জনের প্রাণহানি ঘটে। যা আগস্ট মাসে ছিল ১২২ জন। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ৩টি দুর্ঘটনা ও ২২ জনের মৃত্যু বেড়েছে।
এছাড়া জুলাই মাসে সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরে সংঘটিত হয়। যা আগস্ট মাসে বেড়ে ১ দশমিক ৮১ শতাংশে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, আগস্ট মাসে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪৫ দশমিক ০৭ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে ও ২০ দশমিক ৩২ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। তিনি জানান, বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেশের সড়কের মাঝে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি, এসব গর্তের কারণে আগস্ট মাসে দুর্ঘটনা বেড়েছে। এছাড়া সড়ক–মহাসড়কে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, নসিমন–করিমন অবাধে চলাচল, জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা, সড়কে মিডিয়ান বা রোড ডিভাইডার না থাকা, সড়কে গাছপালায় অন্ধবাঁেকর সৃষ্টি, মহাসড়কের নির্মাণ ক্রটি, যানবাহনের ক্রটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে।