দেশিয় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান দিনদিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এদের মধ্যে চিনি এবং পাট শিল্প অন্যতম। অত্যাধুনিক মেশিনে তৈরি সাদা চিনির কাছে আখ থেকে তৈরি লাল চিনি হারিয়ে যেতে বসেছে। যদি দেশে আখের উৎপাদন বাড়িয়ে দেশিয় চিনি শিল্পের সম্প্রসারণ করা যেত তাহলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হতো। সঠিক পরিচর্যা বা চাষাবাদের অভাব, ফসলের বৈচিত্র্য, বিভিন্ন মেয়াদী সবজি ফসলের আবাদ বৃদ্ধি ফলের বাগান তৈরি ইত্যাদি কারণে দিন দিন আখ চাষের জমি কমে যাচ্ছে। আখের রসেও প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে। জানা গেছে প্রতি ১০০ গ্রাম আখের রসে ৩৯ ক্যালরি, ৯.১ গ্রাম শর্করা, আমিষ চর্বি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ পাশাপাশি রিবোফ্লোবিন এবং ক্যারোটিন রয়েছে। আখ চাষে সার ও কীটনাশক তেমন ব্যবহার করতে হয় না। স্বল্প পরিশ্রম ও কম খরচে আখ চাষে বেশি লাভবান হওয়া যায়। সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা গেছে দেশে চিনি আমদানি হয় ২২–২৪ লাখ টন। মূলত অপরিশোধিত আকারে চিনি আমদানি হয় বেশি। অপরিশোধিত চিনি বা কাঁচামাল এনে প্রক্রিয়াজাত করে চিনি উৎপাদন করে পরিশোধন কারখানাগুলো। এই অপরিশোধিত চিনি আমদানি করতে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হচ্ছে। তাই এখন দেশিয় কাঁচামাল দিয়ে চিনি উৎপাদন করার জন্য শিল্প মালিকরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। বাংলাদেশের ভূমি ও আবহাওয়া পাট চাষের জন্য খুবই উপযোগী। ৯০ দশকে এ দেশে পাট উৎপাদন হতো ১২ লাখ হেক্টর জমিতে। ক্রমেই সেই পাটের জমির পরিমাণ কমতে কমতে ৩০–৪০ বছর ধরে ৪ বা সাড়ে ৪ লাখ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। পাট জাত দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি করে পাট দিয়ে তৈরি শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ, লুঙ্গি, ফতুয়া, পাঞ্জাবি, শোপিস, ওয়ালমেট, নকশিকাঁথা, পাপোশ, জুতা, শিকা, সুতাসহ নানান পাটজাত পণ্য আকর্ষণীয় করে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী তৈরি করে বাজারজাত করতে হবে। দারিদ্র্য বিমোচন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সর্বোপরি এ দেশের ঐতিহ্য ও নিজস্বতা রক্ষায় পাটশিল্পের উন্নয়নের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। নিজের দেশের ঐতিহ্য আমাদের রক্ষা করতে হবে।
প্রয়োজনে প্রযুক্তির সংমিশ্রন ঘটিয়ে বাইরের রাষ্ট্রে আমাদের দেশিয় পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি করতে হবে। সমৃদ্ধির পথে দেশ এগিয়ে যাবে যদি আমাদের দেশপ্রেম জাগ্রত হয়। আগামী প্রজন্মের জন্য একটা বাসযোগ্য পৃথিবী নির্মাণ করার জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ট্রিলিয়ন ডলারের যে স্বপ্ন দেখেছেন সে স্বপ্নের কথা ভাবুন এবং সেভাবে এখন থেকে কাজে নেমে পড়ুন দেখবেন পৃথিবীতে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় গিয়ে পৌঁছে। প্রযুক্তিকে পাশে রেখে জ্ঞান বিজ্ঞানের চরম শিখরে গিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য সরকারের কর্ম প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক। দেশে উৎপাদিত কৃষিজ সম্পদকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন শিল্পায়নের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের উপায় বের করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের ব্যবসায়ী মহলকেও চিন্তা করতে হবে।