দেশর নেতৃত্বে আঁরার ইউনূস

অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাব শপথ গ্রহন বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম চট্রগ্রামের কেউ সরকার প্রধান হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়কসহ রয়েছেন ১৬ উপদেষ্টা

| শুক্রবার , ৯ আগস্ট, ২০২৪ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

তরুণদের দেখানো পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে শপথ নিল অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নেতৃত্ব দেবেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস। ক্ষুদ্র ঋণের প্রবক্তা, গরিবের ব্যাংকার, সামাজিক ব্যবসার অগ্রদূত আর নোবেলজয়ীর উপাধির সঙ্গে তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনে যুক্ত হলো সরকারপ্রধানের পরিচয়।

অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে তাঁর সঙ্গে থাকছেন আরো ১৬ জন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টার পর অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৪০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রামের বাথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম চট্টগ্রামের কেউ সরকার প্রধান হলেন। এর মধ্যে দিয়ে একজন শিক্ষক, অর্থনীতির গবেষক আর ‘গরিবের ব্যাংকার’ হয়ে শান্তিতে নোবেল জয়ীর পরিচয়ের পর নতুন এক পরিচয় পেলেন মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে শপথ গ্রহণের পর চট্টগ্রামের অনেকেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেছেন, ‘দেশর নেতৃত্বে এখন চাটগাঁর ইউনূস, আঁরার ইউনূস।’ আনন্দের বন্যা বয়ে যায় হাটহাজারীতে তাঁর নিজ গ্রাম ও জোবরায়।

বিডিনিউজ জানায়, নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং পরে গোপনীয়তার শপথ নেন ড. ইউনূস। শপথ নেওয়ার পর রাষ্ট্রপতি তাকে অভিনন্দন জানান। এরপর ১৬ উপদেষ্টার নাম ঘোষণা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তদের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ১৩ জন একসঙ্গে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে শপথ নেন। শপথ নেওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী শপথ বইতে সই করেন সবাই।

যারা উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক দুই তরুণ তুর্কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র নাহিদ ইসলাম ও সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তাদের মধ্যে নাহিদের বয়স ২৬, আর আসিফের ২৫। বাংলাদেশে এত কম বয়সে সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ার নজির আর কারো নেই।

১৬ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদের চারজন নারী। তারা হলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা (উবিনীগ)-এর নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরজাহান বেগম এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন শপথ নিয়েছেন উপদেষ্টা হিসেবে। লেখক, রাজনীতিবিশ্লেষক ও কলামিস্ট অধ্যাপক আসিফ নজরুল, সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এর সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খানও পেয়েছেন অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব। শপথ নিয়েছেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমীর ও সুন্নী দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত আ ফ ম খালিদ হোসেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন অনুষ্ঠানে জানান, অপারেশন জ্যাকপটে অংশ নেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুকআজম বীর প্রতীক, সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় ঢাকার বাইরে থাকায় শপথ নিতে বঙ্গভবনে আসতে পারেননি। বঙ্গভবনের দরবার হলে এই শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে। এরপর কোটা সংস্কার ও সরকারবিরোধী আন্দোলনে ‘শহীদদের’ স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন সবাই। ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের পর শুরু হয় শপথগ্রহণ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। সবশেষে ছিল চা পানের পর্ব।

রাজনীতিক, শিক্ষাবিদ, কূটনীতিকসহ সরকারি ও সামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন প্রায় চারশ অতিথির মধ্যে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্ববরেণ্য এক ব্যক্তিত্ব
পরবর্তী নিবন্ধচবি ভিসি, প্রো-ভিসি ও প্রক্টরদের পদত্যাগের আল্টিমেটাম