দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করতে প্রয়োজন বাস্তবমুখী পদক্ষেপ

| বুধবার , ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

আজ ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯-এর ভয়াবহতার মধ্যে এবারও পালিত হচ্ছে এ দিবস। সাক্ষরতা হচ্ছে মৌলিক শিক্ষার ভিত্তি। শিক্ষার সুযোগের বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করে সাক্ষরতার ওপর। বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৬৭ সালে ইউনেস্কো প্রথম সাক্ষরতার সংজ্ঞা দিলেও প্রতি দশকেই এ সংজ্ঞা পাল্টাতে হয়েছে। এটিই স্বাভাবিক। ১৯৯৩ সালে ইউনেস্কো এ সংজ্ঞাটি নির্ধারণ করে- যে ব্যক্তি নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য পড়তে পারবে, সহজ ও ছোট বাক্য লিখতে পারবে এবং দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ হিসাব-নিকাশ করতে পারবে। কিন্তু এ সংজ্ঞাটিও এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তার প্রমাণ আমরা কোভিড পরিস্থিতিতে পেয়ে গেছি। একজন ব্যক্তি ভালোভাবে বাংলা পড়তে পারলেন, সাধারণ যোগ-বিয়োগ পারলেন; কিন্তু এ কোভিডকালীন উপরোল্লিখিত ডিভাইসগুলোর সঙ্গে পরিচিত নন, ব্যবহার করতে জানেন না; তাকে আমরা এ পরিস্থিতিতে সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন বলব কিনা, তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।
আমরা জানি, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সাক্ষরতার বাড়ানোর জন্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি মনে করেন ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ ও জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে একটি শিক্ষিত জাতি গড়ে তোলা ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। তাই একটি দক্ষ ও শিক্ষিত জাতি গড়ে তুলতে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার কেবল বৃদ্ধিই পাচ্ছে।
বর্তমান সরকার দেশের নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরতা দানের লক্ষ্যে ৬৪টি জেলায় মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। শতভাগ সাক্ষরতা অর্জন ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্য এবং নিরক্ষরতামুক্ত সোনার বাংলায় পরিণত করাই সরকারের লক্ষ্য। তারা বুঝতে পারেন, দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ অপরিহার্য। দেশে একজন মানুষকেও নিরক্ষর রাখতে চায় না সরকার। তাই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকার গ্রহণ করেছে বিভিন্ন প্রকল্প। তবে প্রকল্প অনুযায়ী সাক্ষরতার গতি তেমন বাড়েনি বলে অভিজ্ঞমহল মত প্রকাশ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি হিসাবে যে বলা হচ্ছে দেশের জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশ অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন, সেটি নিতান্তই গড় হিসাব। অথচ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে নিরক্ষরমুক্ত করতে হবে দেশ। বাস্তবে সেই লক্ষ্য থেকে অনেকটাই পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। গত এক বছরে সাক্ষরতার হার বেড়েছে মাত্র দশমিক ৮০ শতাংশ। সাক্ষরতা বাড়ানোর একমাত্র প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ অবস্থায় করোনা মহমারীর আক্রমণ, যার ফলে বাধ্য হয়ে দিতে হচ্ছে অটো প্রমোশনসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা। ফলে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাই পড়েছে হুমকির মুখে। প্রশ্ন রয়েছে শিক্ষার মান নিয়েও। সে অবস্থায় আন্তর্জাতিক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২০৩০ অর্জনও কঠিন হবে। এই কাজটি শুরু করতে হবে একেবারে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকেই। এর জন্য শিখতে হবে, শেখাতে হবে, হাতে-কলমে কাজ করে দেখাতে হবে, সৃজনশীল চিন্তা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ধীশক্তি, মেধা, দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘শতভাগ সাক্ষরতা অর্জনের কর্মসূচিকে সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতি ও প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে কোনো জাতির উন্নয়নে সাক্ষরতার বিকল্প নেই। তাঁরা বলেন, ‘‘শিক্ষা জ্ঞান অর্জনের মূল ভিত্তি, আর সাক্ষর জ্ঞান এর প্রাথমিক সোপান। সাক্ষরতার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনের দ্বার উন্মুক্ত হয়, যা জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ তৈরি করে। তাই সাক্ষরতা অর্জন দেশের মানব সম্পদ তৈরির প্রথম ধাপ।
সাক্ষরতার হার বাড়ানো নিয়ে পূর্বাপর সরকার একের পর এক প্রকল্প নিয়েছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু সেসব প্রকল্প যে খুব বেশি সফল হয়েছে বলে মনে হয় না। ২০১৯ সালের শেষার্ধে এসে নীতিনির্ধারকেরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের পাঠকক্ষে ধরে রাখতে দুপুরের খাবার ও পোশাক দেওয়ার কথা ভাবছে। কয়েকটি এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রকল্প চালুও আছে। উদ্যোগটি ভালো। কিন্তু এটিকে সফল করতে হলে শুধু সরকারি প্রশাসনযন্ত্রের ওপর ভর করলে হবে না; স্থানীয় জনগণকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করতে প্রয়োজন একটি বাস্তবমুখী, টেকসই ও সমন্বিত পদক্ষেপ এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে