দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কাজে নামতে হবে

| রবিবার , ২৮ মার্চ, ২০২১ at ৮:৪৯ পূর্বাহ্ণ

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ এখন দারিদ্র্য জয় ও উন্নয়নের মডেল। বিশ্বের বুকে গর্বিত দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার অর্ধশত বছর অতিক্রম করা জাতীয় জীবনে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক। আমাদের জন্য এই সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব আরও বর্ণময় হয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে সরকার পরিচালনা শুরু করে। আজ বাংলাদেশ সম্পর্কে সব নেতিবাচক এবং নিরাশাবাচক ভবিষ্যদ্বাণী অসার প্রমাণিত হয়েছে।’
বিশ্ব মানচিত্রে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন এক রাষ্ট্র বাংলাদেশ। যার জন্ম হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। দীর্ঘ তেইশ বছরের শোষণ, নিপীড়ন ও সীমাহীন অত্যাচার সহ্য করে বাংলার মুক্তিকামী জনগণ ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশমাতৃকার স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে। নয় মাসের এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর যাবতীয় দম্ভ চূর্ণ করেছিল বাংলার দামাল ছেলেরা।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের দেশ আজ অনেক এগিয়ে। বিবিএস এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব সূচকের প্রথম যে তথ্য পাওয়া যায় তাতে দেখা যাচ্ছে, ১৯৭৩-১৯৭৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের রফতানি আয় ছিলো মাত্র ২৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেসময় জিডিপি’র আকার ছিলো ৭ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। মাথাপিছু আয় মাত্র ১২৯ ডলার। দারিদ্র্যের হার ৭০ শতাংশ। পঞ্চাশ বছর পর এসে দেখা যাচ্ছে রফতানি আয় বহুগুণে বেড়ে মিলিয়ন ডলার থেকে এসেছে বিলিয়ন ডলারের ঘরে। ২০২০ সালের হিসেবে যা ৩৯.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জিডিপি আকার ১৯৭৩-১৯৭৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসে বেড়েছে ৩৬৯ গুণ। পরিমাণে যা প্রায় ২৭ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৬ গুণ। অর্থাৎ ২,০৬৪ ডলার। দারিদ্রের হার কমে হয়েছে ২০.৫ শতাংশ। একসময় যে দেশটি তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে আখ্যায়িত ছিলো এখন বলা হচ্ছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে সেই দেশটি হতে যাচ্ছে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। স্বল্পোন্নত থেকে দেশটি এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকাভুক্ত হয় ১৯৭৫ সালে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের অন্তর্ভুক্ত হতে ৩টি শর্ত রয়েছে। ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ৩টি শর্তই পূরণ করে। পরে ২০২১ সালেও ৩টি শর্ত পূরণে প্রয়োজনীয়তা দক্ষতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী, কোন দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদ- পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। বাংলাদেশ সেই সুপারিশ পেয়েছে। জাতিসংঘের ৩টি শর্তের প্রথমটি হচ্ছে, মাথাপিছু আয়। এরপর অর্থনৈতিক ঝুঁকি এবং সবশেষে মানবসম্পদ উন্নয়ন। মাথাপিছু আয়ে জাতিসংঘের শর্ত পূরণে ন্যূনতম দরকার এক হাজার ২শ ৩০ ডলার। বাংলাদেশে সেখানে ২০২০ সালে মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৬৪ ডলার। অর্থনৈতিক ঝুঁকি কতটা আছে, সেটা নিরূপণে ১০০ স্কোরের মধ্যে ৩২ এর নিচে স্কোর হতে হয়। বাংলাদেশ সেখানে নির্ধারিত মানের চেয়েও ভালো করেছে। অর্থাৎ ২৫.২ স্কোর করেছে। মানবসম্পদ উন্নয়ন যোগ্যতায় দরকার ৬৬’র উপরে স্কোর। বাংলাদেশ সেখানে পেয়েছে আরো বেশি ৭৩.২ স্কোর। অর্থনৈতিক উন্নতির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে গত কয়েকদশকে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের রফতানি আয় বেড়েছে। রেমিটেন্স বেড়েছে। কৃষি-শিল্পের উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান বেড়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নও হয়েছে।
জাতির উদ্দেশে ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, আজকের এই অর্জন এ দেশের সাধারণ মানুষের। এ দেশের কৃষক-শ্রমিক-পেশাজীবী, আমাদের প্রবাসী ভাইবোনেরা, এ দেশের উদ্যোক্তাগণ- তাদের শ্রম, মেধা এবং উদ্বাবনী শক্তি দিয়ে দারিদ্র্য নিরাময়ের অসম্ভব কাজকে সম্ভব করে তুলেছেন। আমার সরকার শুধু নীতি সহায়তা দিয়ে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেছে। আপনারা প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশের মানুষ অনুকূল পরিবেশ পেলে যে কোনো অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে।
তিনি বলেন, ‘সুবর্ণজয়ন্তীর এই শুভক্ষণে আমাদের শপথ নিতে হবে, কেউ যেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। দেশের গণতান্ত্রিক এবং উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে না পারে।’ আমরা চাই, আমাদের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে হাল ধরে জাতিকে এগিয়ে নিচ্ছেন, তাঁর হাত শক্তিশালী করা দরকার। দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে