শারদীয় দুর্গাপূজার বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। শরতের আগমনের মাধ্যমেই দেবী দুর্গার বা শারদীয় উৎসবের আগমন ঘটে। কিন্তু এবার দেবী দুর্গা আসছেন হেমন্তে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মাধ্যমে মর্ত্যলোকে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা বেজে ওঠে। মহালয়ার পর থেকেই শুরু হয় দেবীকে বরণ করার প্রস্তুতি।
২২ অক্টোবর ষষ্ঠীর মাধ্যমে শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। ২৬ অক্টোবর দশমীর মাধ্যমে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। এবার দেবী দুর্গা ঘোটকে চড়ে মর্ত্যলোকে আসছেন। নগরীতে এবার ২৫২টি মণ্ডপে পূজা উদযাপিত হবে। নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে মহানগর পুলিশ ২৬টি নির্দেশনা দিয়েছে পূজা উদযাপন কমিটিকে।
দুর্গাপূজাকে উপলক্ষ করে বহু মানুষের সারা বছরের খোরাক উঠে আসে। যারা প্রতিমা গড়েন, মণ্ডপ গড়েন, মূর্তির সাজ-পোশাক তৈরি করেন, আলোকসজ্জার কাজ করেন, এরকম অনেক পেশা আর ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষ তাকিয়ে থাকেন উৎসবের দিকে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এবার কমেছে পূজামণ্ডপের সংখ্যা। উৎসব মানেই জনসমাগম। একসঙ্গে অনেক লোক মানেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা। এই শঙ্কা মাথায় রেখে মণ্ডপের সংখ্যা কমিয়ে পূজার আয়োজন করা হচ্ছে। মানুষের ভাবাবেগের কথা মাথায় রেখে বেশ কিছু নিয়ন্ত্রণ এবং বিধিনিষেধ আরোপ করে পূজা আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আয়োজন, আড়ম্বর সবই এ বছর কম হবে।
গত বছরের তুলনায় পূজামণ্ডপ কম হচ্ছে। তাই প্রতিমাও তৈরি হচ্ছে কম। প্রতিমা শিল্পীদের গত বছরের মতো ব্যস্ততা নেই। যে কয়েকটি অর্ডার পেয়েছেন সেগুলো নিয়ে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। প্রতিমা শিল্পীরা মনে করেন, তারা সারা বছর টুকিটাকি প্রতিমা বানালেও সবচেয়ে বেশি আয় হয় দুর্গা উৎসবকে কেন্দ্র করে। এ সময় অর্ডার বেশি থাকে, আবার ক্রেতাদের বাজেটও বেশি থাকে। এবার প্রতিমার আকারও ছোট করা হচ্ছে। অনেকেই ঘট ও ছোট আকৃতির প্রতিমায় করবেন দুর্গাপূজা। করোনা থেকে মানব জাতিকে রক্ষায় এবারের পূজায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন থাকবে।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে এরই মধ্যে আয়োজন হয়ে গেছে বাজনার। মণ্ডপে বাজনার জন্য জালিয়া ঢুলিদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও অন্যান্য বছরের ন্যায় তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা দিয়ে খুশি করতে পারছে না পূজা উদযাপন কর্তৃপক্ষ।
তরনী সর্দার দলের তরণী দাসের সন্তান ও বর্তমানে এ দলের স্বত্বাধিকারী দিপু দাস বলেন, গত বছর যে বাজনা কন্ট্রাক্ট করা হয়েছে ৬০ হাজার টাকায়, এ বছর তা করতে হচ্ছে ২০ হাজার টাকায়। প্রতি বছর দুর্গাপূজায় আমাদের ১৫ থেকে ২০ জন টিম নিয়ে বাজনার কাজ করতাম। কিন্তু এ বছর তা কমে হয়েছে তিনজনে। অন্যান্য বছর সানাই, ডগর, বাংলা ডোল, কাঁসর, কীবোর্ডসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া হতো। কিন্তু এ বছর ঢাক, ঢোল, জোরখাই ছাড়া আর কোনো বাজনা নেওয়া হচ্ছে না।
করোনার কারণে এবার চট্টগ্রাম মহানগরীর পূজামণ্ডপগুলোতে পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে না। মহানগর পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, এবার কোনো পূজামণ্ডপে সার্বক্ষণিক পুলিশ থাকছে না। টহলের মাধ্যমে পুলিশ মণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। আর মণ্ডপের ভেতর যেন ২০-২৫ জনের বেশি এক সঙ্গে জড়ো না হন, সেই বিষয়ে খেয়াল রাখার জন্য পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রবেশ পথে যাতে ভিড় না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দর্শনার্থীদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে।
এদিকে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদও ২৬ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি প্রতিটি মন্দিরের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। মন্দিরের সবাইকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রবেশ এবং বাইরে যাওয়ার পৃথক ব্যবস্থাও রাখতে বলা হয়েছে। কোনো ধরনের পটকা বা বাজি ফোটানো, উচ্চস্বরে সংগীত বাজানো যাবে না। মন্দিরে সব ধরনের সাজসজ্জা, আলোকসজ্জা, আরতি প্রতিযোগিতা, মেলার আয়োজন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে।