দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ পাল্টাপাল্টি হামলা, আহত ৪০

পটিয়া আল জামেয়া মাদরাসার বিরোধ

পটিয়া প্রতিনিধি | সোমবার , ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:১৩ পূর্বাহ্ণ

পটিয়ায় আল জামিয়া আল ইসলামীয়া মাদরাসায় সাবেক মহাপরিচালক ওবায়দুল্লাহ্‌ হামযার পদায়ন নিয়ে বিরোধের জেরে মাদরাসা ছাত্রদের মধ্য উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বিগত ৩/৪ মাস ধরে চলে আসা এ বিরোধের জের ধরে গতকাল রবিবার সকাল থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা মাদরাসা থেকে বেরিয়ে চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কে প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে এ অবরোধ করে তারা। পরে দুইটার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ব্যারিকেড তুলে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এতে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় ৪০জন আহত হয়।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, চট্টগ্রামের অন্যতম বড় কওমি মাদরাসাটির পরিচালনা ও কর্তৃত্ব নিয়ে গত তিন মাসেরও বেশি সময় বিবদমান দু’পক্ষে বিরোধ চলছিল। গত শনিবার বিকালে হেফাজত ইসলাম আমির আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবু নগরী ও হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা খলিল আহমদ কাসেমী উপজেলার জিরি এলাকায় শিল্পপতি মীর আহমদ সওদাগরের নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। এতে আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবু নগরী ইমামতি করেন। রাত ৮টায় আল্লামা মহিবুল্লাহ বাবু নগরী ও আল্লামা খলিল আহমদ কাসেমী পটিয়া মাদরাসায় মুরুব্বীদের কবর জেয়ারত করতে আসেন। এ খবর পেয়ে মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামযার লোকজন মাদ্রাসায় গোপনে শূরা বৈঠক করার অভিযোগ এনে মাদরাসায় ঢোকার চেষ্টা করে। পরে রাত ১২ টায় পটিয়া থানার পুলিশ নিয়ে মাদরাসায় জোরপূর্বক ঢুকে মুহিবুল্লাহ বাবু নগরী ও খলিল আহমদ কাসেমীকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা চালায় এবং নাজেহাল করে। নিরাপত্তার কারণে রাতে বের না হলেও ওই দুই আলেম গতকাল রবিবার সকালে মাদরাসা থেকে ফিরে যান। এরপর থেকে মাদরাসায় উত্তেজনা শুরু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১০ টার দিকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহাপরিচালক ওবায়দুল্লাহ হামযার অনুসারীরা মাদরাসার ভিতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়াপাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এসময় কয়েকজন ছাত্রকে বেধড়ক পেটানো হয়।

এতে খালেদ (২০), আরত (২২), আজাদ (২২), তানজিদ (২০), আবদুল্লাহ (২০), আতাউর রহমান (১৯), এমরান (২৪), আরফ (২৩), রিয়াদ (২০), তালহা (১৬) সহ প্রায় ৩০ জন ছাত্র আহত হয়। অন্যদিকে প্রতিপক্ষের শহীদুল্লাহ্‌ (২৩) মোহাম্মদ তৈয়ব (২০), কামাল উদ্দিন (২৪), আহমদ হোসাইন (১৮), মোহাম্মদ ইলিয়াছ (১৮), ইকবাল হোসাইন (২১), মোহাম্মদ রাইয়ান (১৯) আহত হয়। আহতরা পটিয়া হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানা যায়। এর মধ্যেই শত শত ছাত্র মাদরাসা ছেড়ে বেরিয়ে আসে। তারা খণ্ড খণ্ড হয়ে চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া পৌরসভার ডাকবাংলো মোড় থেকে পটিয়া থানার মোড় পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। কিছু ছাত্র মাদরাসা সংলগ্ন চট্টগ্রামদোহাজারি রেললাইনের ওপর অবস্থান নেয়। ব্যারিকেড চলাকালে পটিয়া পৌরসভার মহাসড়ক দিয়ে কোনো দূরপাল্লার যানবাহন চলেনি। তবে বাইপাস দিয়ে দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল করে। মাদরাসা এলাকায় দোকানপাট বন্ধ ছিল। ব্যারিকেড চলাকালে জামিয়া মাদরাসার ছাত্ররা মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামযাকে লোভী, প্রতারক, সন্ত্রাসী, জালিম বলে স্লোগান দেয়। মাদরাসায় ঢুকে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ছাত্রদের ওপর হামলার প্রতিবাদ করে এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামযাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, মাদরাসার বাইরে ছাত্রদের লাঠি, লোহার রড, গুলতি ও গাছের বাটাম নিয়ে প্রতিপক্ষকে তাড়া করতে দেখা যায়।

এদিকে বিকাল ৫টায় মাদ্‌রাসা হলরুমে মাদ্‌রাসা সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে সভাপতি আনোয়ার হোসেন রব্বানী এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, বিজাতীয় সংস্কৃতি চালু, মজলিশে শূরার কমিটির সভা না ডাকা মুহাদ্দিসদের অপমান করা, আর্থিক কেলেংকারির অভিযোগে গত ২৮ অক্টোবর ছাত্র আন্দোলনের মুখে মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামযা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন এবং তাকে শূরা কমিটি অব্যাহতি দেয়। এর পর থেকে ওবাইদুল্লাহ হামযা মাদরাসায় ঢুকতে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। যার কারণে মাদ্‌রাসার ঐতিহ্য নষ্ট হচ্ছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন শাইখুল হাদিস মুফতী আল্লামা আহমদ উল্লাহ, মাওলানা মাহফুজুর রহমান, নুরুল ইসলাম জিহাদী, মাওলানা মঞ্জুরুল কাদের চৌধুরী, দিল মোহাম্মদ, নুরুল আলম চৌধুরী প্রমুখ।

অপর পক্ষ আতরাফে জামেয়ার প্রধান সমন্বয়কারী মাওলানা বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘একটি পক্ষ মাদরাসাকে জিম্মি করে রেখেছে। দুর্নীতিপরায়ণ একটি সিন্ডিকেট তাদের প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। গত ২৮ অক্টোবর মাদরাসার মহাপরিচালক ওবায়দুল্লাহ হামযাকে নির্মমভাবে হেনস্তা করার মধ্য দিয়ে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। এরপর থেকে সিন্ডিকেটটি ঐতিহ্যের এই দ্বীনি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। গত শনিবার তারই ধারাবাহিকবতায় একটি অবৈধ শূরার বৈঠক ডাকার খবরে আমরা মাদরাসায় গেলে ভেতরে থাকা সন্ত্রাসীরা অতর্কিতভাবে আমাদের ওপর হামলা চালায়। তারা মাদরাসাকে মিনি ক্যান্টনমেন্টে পরিণত করেছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মাদরাসা ও এর আশপাশে অবস্থান নিয়েছে। তবে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচেয়ারম্যান পদে লড়তে চান আওয়ামী লীগের ১২ নেতা
পরবর্তী নিবন্ধট্রাক্টর কেড়ে নিল ছাত্রলীগ নেতার প্রাণ