দেড় ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের পবিত্র কুরআন শরীফ

৩৭ বছর ধরে সংরক্ষণ করছেন নগরীর পূর্ব মাদারবাড়ি এলাকার আবছার

মোরশেদ তালুকদার | মঙ্গলবার , ২৫ মার্চ, ২০২৫ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

ক্ষুদ্রাকৃতির রুপার বক্স, বিশেষ লক লাগানো নকশাখচিত বক্সটি খুলতেই বেরিয়ে আসে একটি পবিত্র কুরআন শরীফ। যার দৈর্ঘ্য দেড় ইঞ্চি, প্রস্থ এক ইঞ্চি, পুরুত্ব বা উচ্চতা আধা ইঞ্চি এবং ওজন মাত্র সাড়ে আট গ্রাম। দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে কুরআন শরীফটি সংরক্ষণ করছেন নগরের পূর্ব মাদারবাড়ি মাঝিরঘাট এলাকার বাসিন্দা ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী মো. আবছার উদ্দিন। যিনি দাবি করেন, এটি বিশ্বের অন্যতম ক্ষুদ্র কুরআন শরীফগুলোর একটি। গত সপ্তাহে আজাদী অফিসে আসেন আবছার উদ্দিন। তিনি জানান, রহস্যময় এক ব্যক্তি ১৯৮৮ সালে তাকে কুরআন শরীফটি দেন। তখন তিনি নগরের বায়তুশ শরফ আদর্শ মাদ্রাসার ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র। সেই থেকে কুরআন শরীফটি সংরক্ষণ করছেন। কুরআন শরীফটি ঘিরে একবার তার পরিবারে অলৌকিক ঘটনাও ঘটেছে বলে জানান তিনি।

এদিকে ক্ষুদ্রাকৃতির কুরআন শরীফটির উপরের মলাট চামড়া সদৃশ্য বস্তু দিয়ে বাইন্ডিং করা হয়েছে। কুরআনটির তিন দিকে সোনালি রঙের প্রলেপ দেওয়া রয়েছে। মুদ্রণ খুবই সুন্দর ও স্পষ্ট। কুরআনের কাগজগুলো মসৃণ ও বিশেষায়িত, যা বর্তমান কাগজের মতো নয়। অনেক পার্থক্য রয়েছে। বাইন্ডিংও খুবই মজবুত। বান্ডিং এর সুতাগুলো অদৃশ্য অবস্থায় আছে, যা খালি চোখে দেখা যায় না। ছয় শতাধিক পৃষ্ঠার কুরআন শরীফটি পুরো ৩০ পারায় রয়েছে। এটি খালি চোখে পড়া কঠিন। তবে রুপার বাঙের সাথে লাগানো আতশি কাচ দিয়ে স্পষ্ট পড়া যায়।

কুরআন শরীফটির সংরক্ষক মো. আবছার উদ্দিন আজাদীকে জানান, ছাত্রবস্থায় বায়তুশ শরফ আদর্শ মাদ্রাসার কিছু দূরে অবস্থিত রেল লাইনে স্কুলের টিফিন ছুটির সময় হাঁটতে গিয়ে রহস্যময় ব্যক্তির সাথে দেখা হয় তার। খুব সুন্দর ও সুঠাম দেহে লম্বা আকৃতির লোকটি কথায় আরব দেশের লোকের টান আছে। লোকটি নিজের নাম বলেন মুগনিও ওসমান গণি।

আবছার বলেন, প্রথম দিন লোকটি আমার কাছে কিছু খাবার চাইলে আমি উনাকে খাবার দিই। পরের দিন আমার কাছে কিছু টাকা চাইলে আমি কিছু টাকা দিই। এভাবে কয়েকবার খাবার ও টাকা দেওয়ার পর একদিন তিনি পবিত্র কুরআনের কপিটি আমাকে দেন। সাথ আমার দেয়া টাকাগুলোও ফেরত দেন।

আবছার উদ্দিন কুরআন শরীফটিকে ঘিরে অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে দাবি করে বলেন, ২০০৮ সালের ১০ মে অগ্নিকাণ্ডে আমাদের পুরো বাসস্থানসহ আশেপাশের কয়েকটি ঘর ভস্মিভূত হয়ে যায়। তবে পুরো বাড়ি পুড়ে গেলেও কুরআন রক্ষিত কক্ষটি অলৌকিকভাবে অগ্নিকাণ্ড থেকে সুরক্ষিত থাকে। তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কয়েকদিন পূর্বে কুরআন দাতা ঐ রহস্যময় ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নযোগে দুয়েকবার নির্দেশ দিয়েছিলেন কোরআনটি অন্যত্র সরিয়ে রাখতে। প্রথম দিন আমি তেমন গুরুত্ব দিই নাই। দ্বিতীয়বার ঐ ব্যক্তি কিছুটা রাগান্বিত হয়ে আমাকে আবারও নির্দেশ দেন। এবার আমি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে কুরআনটি অন্য একটি কক্ষে অতীব পবিত্র ও আদবের সহিত সুরক্ষিত স্থানে সংরক্ষণ করি। সংরক্ষণ করার সপ্তাহ দশ দিনের মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে।

আবছার উদ্দিনের দাবি, তার কাছে সংরক্ষিত কুরআন শরীফটি বিশ্বের কুরআনের বিশেষায়িত যাদুঘরে সংরক্ষণ করে রাখা মতো বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

এদিকে এর আগেও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষুদ্রাকৃতির কুরআন শরীফের কপি পাওয়ার তথ্য আছে। এর মধ্যে রাউজানের চিকদাইর এলাকায় নাজমুল নামে এক ব্যক্তির কাছেও এক ইঞ্চি দীর্ঘ একটি কুরআন শরীফ সংরক্ষিত আছে। এছাড়া ২০০৮ সাল থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে সংরক্ষিত একটি ক্ষুদ্রাকৃতির কুরআন; যার দৈর্ঘ্য মাত্র ১ ইঞ্চি, প্রস্থ দশমিক ৭৫ ইঞ্চি, উচ্চতা দশমিক ৭ মিলিমিটার এবং ওজন মাত্র ২ দশমিক ৩৮ গ্রাম। এর আগে ১৯৮২ সালে মিসরের কায়রো শহর থেকে ছাপা হওয়া ৫৭১ পৃষ্ঠার একটি কুরআন শরীফের তথ্য পাওয়া যায, যেটির দৈর্ঘ্য শূন্য দশমিক ৬৬ ইঞ্চি, প্রস্থ শূন্য দশমিক ৫০ ইঞ্চি এবং উচ্চতা শূন্য দশমিক ২৮ ইঞ্চি। এটির মালিক পাকিস্তানের মুহাম্মদ সাঈদ করিম বেবানি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে : তারেক
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬