সবাইকে সন্তুষ্ট করার কাজটি অসম্ভব, অবাস্তব এমনকি অনাবশ্যক। এটার যেমন কোন প্রয়োজনীয়তা নেই তেমনি গ্রহণযোগ্যতাও নেই। আমি আমার কাজটি কতোটা দায়িত্বশীলতা ও সচেতনতার মাধ্যমে সম্পাদন করতে পারছি সেটাই মুখ্য বিষয়। এতে কেউ খুশি হলো কেউবা আবার নাখোশ হলো। জগতজুড়ে এটাই যুগ যুগ ধরে আচরিত নিয়ম। মানব চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এই নিয়ম যেমন করে বিগত দিনে ছিলো তেমনি বর্তমানে আছে, আগামী দিনেও এর ব্যত্যয় হবে না বোধ করি! যে সবার কাছে ভালো হয়, তার কোনো মেরুদণ্ড নেই, ব্যক্তিত্ব নেই, সে আসলেই মুখোশধারী মানুষ! যার ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তা আছে সে সবাইকে খুশি করার চেষ্টারত থাকার কথা না! নিজের বিবেক ও বিশেষ মানুষের কাছেই তার আস্থা অর্জন ও তা ধরে রাখার প্রাসঙ্গিকতা আছে। সকলের আস্থাভাজন হওয়া যায় না আবার সবাইকে সন্তুষ্ট করাও সম্ভব নয়। আমার পারসোনালিটি সবার কাছে আদরনীয় বা পছন্দের নাও হতে পারে। তাই কেউ কেউ আমার সমালোচনা করবে এটাই স্বাভাবিক। যদি সবাই আমাকে পছন্দ করে তাহলে বুঝতে হবে আমি জলের আকার ধারণ করে নিয়েছি বা জলবৎ তরলং হয়ে গেছি! যাতে যখন যে পাত্রে রাখা হবে তার আকৃতি ধারণ করে নিবো!
চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই, অন্যের আলোয় সে আলোকিত! সবাইকে জ্যোৎস্না বিলিয়ে খুশি করাই তার কাজ! কিন্তু সূর্যের কথা যদি বলি, সে কিন্তু স্বাবলম্বী! সূর্য প্রয়োজনমত আলো ছড়ায় আবার তার প্রখর তাপে পোড়াতেও দ্বিধা করে না কাউকে! সে পরোপকারী কিন্তু প্রয়োজনে কঠোর! তাকে ছাড়া আমরা অচল কিন্তু তার কঠোরতাও আমরা মেনে নেই! অর্থাৎ তার পারসোনালিটি এটাই যে সবাইকে সবসময় সুখি রাখা সম্ভব নয় তার পক্ষে এবং ব্যক্তিত্ববান কারো পক্ষে। তাই কিছু মানুষের দৃষ্টিতে খারাপ বা মন্দ থাকাই ভালো বোধ করি, যাতে তারাও বুঝতে পারে যেন, যে যেমন তার সাথে তেমন আচরণ করাটাই পারসোনালিটি। দয়া–মায়া, উদারতা, পরোপকার কিংবা সামাজিকতার স্থান মনুষ্যত্ববোধ সম্পন্ন মানুষের জীবনে অপরিহার্য অনুসঙ্গ নিঃসন্দেহে। কিন্তু ভালোবাসার প্রশ্রয়ে পরিবারের ও জীবনের অবিচ্ছেদ্য প্রিয় মানুষগুলো যেন মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত হয়ে বাঁধনহারা, দলছুট হয়ে না যায়! কিংবা এমন কিছু যেন না করে বসে যাতে সম্পর্কের সুতোটি কেটে যায়! এটির দেখভাল করবার কাজটিও আমাকে করতে হয় বৈ কী! এক্ষেত্রে জীবনের সাথে জড়ানো মানুষের সুন্দর আগামীর জন্য, সার্বিক কল্যাণের জন্য কিছুটা অনুশাসনের কাজ আমাকে করতে হয়! এতে আমার সুখ–স্বাচ্ছন্দ্য, নৈতিকতা আর স্বার্থও যুক্ত আছে অনিবার্য প্রাসঙ্গিকতায়! এটি আবার সমাজের ব্যাপক পরিসরে চিন্তা করলেও তাই! আমি একজন সুস্থ–সচেতন–সংস্কৃতবান, দায়িত্ববান ও মানবিক মানুষের ভূমিকায় নিজেকে দেখতে ইচ্ছুক হলেও কারো চোখে প্রিয় আবার কারো ভাবনায় ও দৃষ্টিতে অপ্রিয়ভাজনও হয়ে যেতে পারি। আমার ভাবনার প্রতিফলন আমার ব্যক্তিত্বের অনুরূপ। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে অমিল ও পার্থক্য থাকতে পারে কিন্তু দায়িত্বশীলতার প্রশ্নে আমরা যেন ঐক্যবদ্ধ থাকি, সচেতন থাকি এবং একে অন্যের সহযোগী হই। মূল কথা হলো দৃষ্টিভঙ্গি যার যার, দায়িত্বশীলতা সবার।