দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেট স্টেডিয়াম চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। একটি পরিপূর্ণ ক্রিকেট স্টেডিয়াম বলতে যা বুঝায় তার সবকিছুই আছে এটিতে। কিন্তু চিটাগাং আউটার রিং রোডের ওভারপাস নির্মাণ করতে গিয়ে স্টেডিয়ামটির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভেঙে ফেলতে হয়েছে। আর সেটি হচ্ছে স্টেডিয়ামের ইনডোর। যেখানে বৃষ্টিকালীন কিংবা অন্য কোনো কারণে বাইরে অনুশীলনে ব্যাঘাত হলে তখন ক্রিকেটাররা অনুশীলন সেরে নেন। তাছাড়াও অনেক সময় ইনডোরে অনুীশলন করতে হয় ক্রিকেটারদের। তাই ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সাথে ইনডোরটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে চিটাগাং আউটার রিং রোড বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ স্টেডিয়ামের পূর্ব পাশে আরেকটি ইনডোর তৈরি করে দিচ্ছে।
দৃষ্টিনন্দন একটি ইনডোর নির্মিত হচ্ছে জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। যা হবে বাংলাদেশে সবচে’ দৃষ্টিনন্দন এবং আধুনিক ইনডোর। প্রায় দুইকোটি টাকা ব্যয়ে এই ইনডোরটি নির্মিত হচ্ছে সম্পূর্ণ স্টিল স্ট্রাকচারে। এরই মধ্যে প্রকল্পের স্থাপনা দাঁড়িয়ে গেছে। আগামী ২/৩ মাসের মধ্যে ইনডোরের সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে আশাবাদী চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস। তিনি বলেন, চিটাগাং আউটার রিং রোড প্রকল্পের অংশ হিসেবেই এই ইনডোর নির্মাণ করা হচ্ছে। স্টাইল লিভিং আর্কিটেকট লিঃ এর প্রিন্সিপ্যাল আর্কিটেক্ট মোঃ মিজানুর রহমান এই ইনডোরের ডিজাইন করেছেন। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি আন্তর্জাতিকমানের একটি ইনডোর তৈরি করতে। যেহেতু এটি একটি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম সেহেতু ইনডোরটি দেখে যাতে দেশের সুনাম বৃদ্ধি পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই ইনডোরটির ডিজাইন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগের ইনডোরটি ছিল এক ধরনের ওয়্যার হাউজের মত। তবে নতুন ইনডোরটি হবে দৃষ্টিনন্দন। যা দেশের ইমেজকে বৃদ্ধি করবে। ইনডোরটি এখনো নির্মাণাধীন থাকলেও এর থ্রি ডি ছবি দেখলেই বুঝা যায় কতটা দৃষ্টিনন্দন এই ইনডোরটি। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে এটি যেন একটি বিমানের উপরিভাগ। যার দেওয়ালগুলো হবে টেম্পার গ্লাসের। ডাবল গ্লাস বা সেন্ডুইচ গ্লাস দিয়ে নির্মিত হবে ইনডোরের দেওয়াল। যা হাতুড়ি দিয়েও ভাঙা যাবে না। মূলত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেই এ ধরনের গ্লাস ব্যবহার করা হচ্ছে। আর উপরের ছাদটি হবে স্টিল স্ট্রাকচারের। তার নিচেও আবার তাপ প্রতিরোধক মেটিরিয়াল ব্যবহার করা হবে। এই ইনডোর নির্মাণ করতে যেসব স্টিল ব্যবহার করা হচ্ছে সে সব তৈরির মেশিন বাংলাদেশে না থাকায় বিদেশ থেকে একেবারে প্রস্তুত করে আনা হয়েছে বলে জানান আর্কিটেক্ট মোঃ মিজানুর রহমান।
ইনডোরটির বাইরের অংশের দৈর্ঘ্য ২২০ ফুট আর প্রস্থ ১০০ ফুট। আর ভেতরের যে অংশটা খেলার জন্য ব্যবহার করা হবে তার দৈর্ঘ্য ১৪২ ফুট আর প্রস্থ ৫৮ ফুট। ইনডোরে থাকবে চারটি উইকেট। মূল প্রবেশ পথের এক পাশে থাকছে ছোট্ট একটি জিম। আরেক পাশে টয়লেট ব্লক। অপরপ্রান্তে একপাশে থাকবে একটি চেঞ্জিং রুম আর অন্যপাশে থাকবে একটি স্টোর রুম। এছাড়া ইনডোর পরিচালনার জন্য একটি অফিস রাখা হয়েছে ডিজাইনে। ইনডোরের চারপাশে থাকবে ওয়াকওয়ে। সব মিলিয়ে একেবারে আন্তর্জাতিকমানের একটি ইনডোর পাচ্ছে জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। আর এই ইনডোরকে কেন্দ্র করে করা হবে সৌন্দর্য বর্ধনের বেশ কিছু কাজ। দীর্ঘ সময় ধরে অব্যবহৃত হয়ে পড়ে থাকা জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টার সংলগ্ন এলাকাটি যেন নতুন রূপে সাজছে এই ইনডোরকে ঘিরে।
জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার ফজলে বারী খান রুবেল জানান গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে কাজ শুরু হওয়া ইনডোরটি আগামী জানুয়ারিতে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ক্রিকেট বোর্ডকে। তবে ইনডোরের ভেতরের এস্ট্রা টার্ফের কাজটি ক্রিকেট বোর্ডকেই করতে হবে। যেহেতু এটি একটি ট্যাকনিক্যাল বিষয় তাই এই কাজটি ক্রিকেট বোর্ড করবে। তবে সে সবের খরচও বহন করবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ। আগামী জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে। তখন হয়তো জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সরব হবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। আর ঠিক তখনই দেখা যাবে দৃষ্টিনন্দন এক ইনডোর। যা দেশেরতো বটেই, বিশ্বেরও হয়তো সেরা কয়েকটি ইনডোরের একটি হবে।