দূষণ কমানোর জন্য প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে

| শুক্রবার , ২৫ মার্চ, ২০২২ at ৮:২৫ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের বাতাস বিশ্বে ‘সবচেয়ে দূষিত’। খবরটি গত ২৩ মার্চ দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে,
বিশ্বের ৬ হাজার ৪৭৫টি শহরের বায়ুমানের তথ্য বিশ্লেষণ করে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০২১ সালে একটি দেশও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রত্যাশিত বায়ুমান বজায় রাখতে পারেনি, আর দূষণের মাত্রার বিচারে সবার উপরে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। কোথায় প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ভাসমান ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের বস্তুকণার (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম) পরিমাণ কত মাইক্রোগ্রাম (পিএম২.৫), তার ভিত্তিতে এই বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সুইস সংস্থা আইকিউ এয়ার, যারা বায়ুদূষণ এবং বায়ু পরিশোধন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে।
রয়টার্স লিখেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) তাদের বায়ুমান নির্দেশিকা সংশোধন করে ঘোষণা দেয়, বাতাসে পিএম২.৫ এর পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি হলেই ওই বাতাসকে আর স্বাস্থ্যকর বলা যাবে না, কারণ এ বস্তুকণার অল্প ঘনত্বও স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। আইকিউ এয়ারের প্রতিবেদন বলছে, সমীক্ষার প্রায় সাড়ে ৬ হাজার শহরের মধ্যে মাত্র ৩ দশমিক ৪ শতাংশ শহরের বাতাসে ২০২১ সালে ডব্লিউএইচও প্রত্যাশিত বায়ুমান পাওয়া গেছে। আর ৯৩টি শহরে পিএম ২.৫ এর মাত্রা ছিল ওই গ্রহণযোগ্য মাত্রার ১০ গুণ বেশি।
বাংলাদেশের বাতাসে পিএম ২.৫ এর গড় পরিমাণ ছিল ৭৬ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম, যা সমীক্ষার ১১৭টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এই হিসেবে গতবছর বিশ্বে বাংলাদেশের বাতাসই ছিল সবচেয়ে দূষিত।
পরিবেশ ও জীবন একে অপরের পরিপূরক। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে অব্যাহত থাকে জীবনচক্র। তবে মানুষের জীবনচক্রে গৃহপালিত প্রাণির রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। আবার প্রাণিদেরও বেঁচে থাকতে নির্ভর করতে হয় পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার ওপর। পরিবেশের বিপর্যয় মানে জীবনের বিপর্যয়। প্রাণিস্বাস্থ্য, প্রাণি উৎপাদন ব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু পরিবর্তন একটি আন্তঃসম্পর্কিত জটিল প্রক্রিয়া, যার ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করে রোগের প্রাদুর্ভাব, উৎপাদন ব্যবস্থাসহ আরও অনেক কিছু। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈরী জলবায়ুর করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পাচ্ছে না বাংলাদেশও। এর পাশাপাশি যোগ হয়েছে পরিবেশদূষণ। দূষণের দোষে দূষিত হয়ে উঠছে চারপাশ। শিল্প বর্জ্য, মেডিকেল বর্জ্য, প্রাণিজ এবং অন্যান্য বর্জ্যসহ বিভিন্ন রাসায়নিক বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, যার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে জীববৈচিত্র্যের ওপর। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গৃহপালিত প্রাণি। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে চারণভূমির অভাবে প্রাণি খাদ্যের অভাব হচ্ছে, তাপজনিত, ভেক্টরবাহিত এবং সংক্রামক রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে প্রাণিসম্পদ উৎপাদন হচ্ছে বাধাগ্রস্ত। অতিবৃষ্টি, উচ্চতাপমাত্রা এবং খরার ফলে মানুষের অজান্তেই সৃষ্টি হচ্ছে একের পর এক শক্তিশালী ভাইরাস। জলবায়ু পরিবর্তনে বিভিন্ন প্রাণির জটিল ও কঠিন রোগ দেখা দিচ্ছে। পরিবেশের ওপর জলবায়ুর প্রভাবের জন্য ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত, ভেক্টর প্রভাবিত এবং খাদ্যাভাবজনিত রোগসহ নানা রোগ হয়ে থাকে। নদীর এক কূল ভেঙে গড়ে উঠছে আরেক কূল। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন পরিবেশ, যা অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের জন্য বাসযোগ্য হয়ে ওঠে না।
প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা জরুরি। প্রকৃতি ও পরিবেশের মাঝেই বিচিত্র জীবনের বিকাশ ঘটে। পরিবেশের জন্যই মানুষ ভাল মন্দ হয়। পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্বের জন্য প্রয়োজন শান্তিময় সুস্থ পরিবেশ। বেঁচে থাকার জন্য যে পরিবেশের প্রয়োজন, সে পরিবেশ নানা কারণে জটিল আকার ধারণ করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশ দূষণের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। দূষণ জনিত মৃত্যুতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা বায়ু দূষণের, যা মোট মৃত্যুর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ।
তাই ধূলাবালি থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করার জন্য প্রযোজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যেখানে উন্নয়ন কাজ চলছে, সেখানে হয়তো ধূলাবালির প্রকোপ থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু পুরো শহর ধূলায় আক্রান্ত হওয়ার কথা নয়। শব্দ ও বায়ু দূষণ কমানোর জন্য প্রথমেই প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ বা দূষণের মাত্রা তদারকির জন্য একটি বোর্ড গঠন করা জরুরি। বিদ্যমান পরিবেশ আইনকে সামনে রেখে দূষণ সৃষ্টিতে জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে