দূষণে কালো বোয়ালিয়া খালের পানি, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ

মোহাম্মদ মারুফ, লোহাগাড়া | শনিবার , ১ নভেম্বর, ২০২৫ at ৭:৩৭ পূর্বাহ্ণ

লোহাগাড়ায় বোয়ালিয়া খালের পানি দীর্ঘদিন যাবত ময়লাআবর্জনায় দূষিত হয়ে পড়েছে। দূষণে কালো হয়ে যাওয়া খালের পানি থেকে আশপাশের ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ আবাসিক এলাকায় প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। খালটি পরিচ্ছন্ন রাখার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, যার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে জনজীবন।

জানা যায়, উপজেলার কলাউজান ইউনিয়নের উত্তর কলাউজান মিশ্র বাপের পাড়া এলাকায় বিস্তীর্ণ কৃষি জমি থেকে বোয়ালিয়া খালের উৎপত্তিস্থল। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ কিলোমিটার ও গড় প্রস্থ প্রায় ৩০ ফুট। এই বোয়ালিয়া খাল কলাউজান ইউনিয়ন, লোহাগাড়া সদর ইউনিয়ন ও আমিরাবাদ ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সাতকানিয়ালোহাগাড়ার সীমান্ত তিন খালের মুখ এলাকায় মিলিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বোয়ালিয়া খাল দখল ও দূষণে বর্তমানে মৃত প্রায়। খালের পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে একের পর এক অবৈধ স্থাপনা। কোথাও বাড়িঘর আবার কোথাও দোকানঘরসহ নানা স্থাপনা। খালের পাড়ে একাধিক স্থানে দেখা গেছে মলয়ার স্তূপ। পানিতে ভাসছে পলিথিন, পচা খাবার, প্লাস্টিক বোতলসহ নানা রকম বর্জ্য আর মশাসহ নানা ধরনের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ। দূষণের কারণে পানির রং কালো হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তীব্র দুর্গন্ধে কয়েক মিনিটও দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর। দখলের কারণে খালের কোনো অংশ ৮ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত সরু হয়ে গেছে। ফলে খালের স্বাভাবিক গতিতে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। উপজেলা সদর ইউনিয়নের দরবেশহাটের পূর্ব পাশে খালের পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে একাধিক কসাইখানা। পশু জবাইয়ের পর রক্ত আর নাড়িভুড়ি এবং আশপাশের লোকজন ময়লাআবর্জনা ফেলে খালে।

এদিকে, গতকাল শুক্রবার সকালে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘বোয়ালিয়া খাল রক্ষা কমিটি’ নামে এক সংগঠনের আত্মপ্রকাশ করা হয়েছে। এতে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শরীফকে আহ্বায়ক ও মোহাম্মদ এমরানকে সদস্য সচিব করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরি পরিষদ গঠন করা হয়। এ সময় স্থানীয় মাসুদুর রহমান, ইলিয়াস হোসেন, শহিদুল ইসলাম, এএইচ টিপু, জসিম উদ্দিন, হাবিবুল্লাহ মিজবাহসহ নবগঠিত কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আমিরাবাদের বাসিন্দা সাজ্জাদ হোছাইন জানান, বোয়ালিয়া খাল হলো একমাত্র খাল, যা উপজেলা সদর বটতলী স্টেশন এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। কিন্তু দখল ও দূষণের কারণে এই খাল আজ অস্তিত্ব সংকটে। একসময় যার জলধারা ছিল স্বচ্ছ, এখন তা বর্জ্য আর ময়লায় ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। খালের জীববৈচিত্র্য প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বোয়ালিয়া খাল বড় বড় ভবনের নিচে চাপা পড়বে। যার ফলে স্টেশন কেন্দ্রিক এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়বে। তখন সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হবে জলাবদ্ধতা ও পরিবেশগত বিপর্যয়। এখনই দরকার খাল দখলমুক্ত ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন, স্থানীয় জনগণ ও পরিবেশ সচেতন নাগরিকদের সম্মিলিত উদ্যোগ।

আমিরাবাদ এম এম সোলতান হোছাইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেছে, খাল থেকে আসা দুর্গন্ধে শ্রেণিকক্ষে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। গরমের সময় দুর্গন্ধ আরো বেড়ে যায়। খালের পাশে স্কুল থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। লোহাগাড়া উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মুহাম্মদ শের আলী জানান, সরকারি খাল, ছড়া ও ঝিরির পানি দূষণ করা দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৭৭ ধারার অধীনে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। স্বাস্থ্য বিভাগ এই ধারায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। একই সাথে এটি বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর অধীনেও অপরাধ। যা পরিবেশ অধিদপ্তর প্রয়োগ করে। লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন জানান, দূষিত পানির গ্যাস ও দুর্গন্ধ দীর্ঘমেয়াদে শ্বাসনালীর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া খালের আশপাশের এলাকায় ত্বকের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, এলার্জি ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, খাল দখল ও দূষণ করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় পরিবেশ দূষণের ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। বোয়ালিয়া খাল দখল ও দুষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে আহত বিজিবি সদস্যের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধপ্রতিষ্ঠার ৬০ বছরেও একটি রাস্তা পেল না স্কুলটি