দূষণের উৎসগুলো চিহ্নিত করে বায়ু দূষণ কমিয়ে আনতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ১৬ জুন, ২০২২ at ৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে বায়ু দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশিদের গড় আয়ুতে বড় প্রভাব রাখছে বলে বৈশ্বিক এক গবেষণায় দেখা গেছে। গতকাল ১৫ জুন দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের (ইপিআইসি) গবেষকরা বলছেন, দূষণের কারণে গড়ে সাত বছর করে আয়ু হারাচ্ছে বাংলাদেশিরা। ইপিআইসি প্রবর্তিত এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স (একিউএলআই) নির্ণয়ে গবেষকেরা বাতাসে পিএম২.৫ (ক্ষতিকর ভাসমান কণা যা ফুসফুসের ক্ষতি করে) এর মাত্রা হিসাব করতে স্যাটেলাইট তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছেন। তার ভিত্তিতে দেওয়া প্রতিবেদনে বাংলাদেশকেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষণের শিকার দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বায়ু দূষণের এই সূচকের হিসাবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার পাঁচ দেশের চারটিই দক্ষিণ এশিয়ায়। আর বায়ু মানের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানী হচ্ছে ভারতের নয়া দিল্লি।
ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর এই বায়ু দূষণ জীবনকাল সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশে সবচেয়ে দূষিত শহর ঢাকার বাসিন্দারা গড়ে ৮ বছর করে আয়ু হারাচ্ছেন। চট্টগ্রামে আয়ু কমছে সাড়ে ছয় বছর করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ৬৪ জেলার সবক’টিতেই বাতাসে দূষণকারী কণার উপস্থিতি ডব্লিউএইচওর সহনীয় সীমার বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার বিপুল জনসংখ্যা এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে এই অঞ্চলের গড় আয়ু হ্রাসের পরিমাণ বিশ্বের মোট আয়ুষ্কালের ৫২ শতাংশ এবং এটা হচ্ছে কারণ এখানকার বাতাসে ডব্লিউএইচওর নির্দেশিত সীমার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে দূষণকারী কণার উপস্থিতি।
বায়ু দূষণ এমনভাবে বেড়ে চলেছে, যাকে রোধ করা না গেলে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হতে হবে আমাদের। বিবিসির একটা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বায়ু দূষণ রোধ করা গেলে মোটামুটি পাঁচটি উপায়ে উপকৃত হবে বাংলাদেশ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে : গড় আয়ু বাড়বে। স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার বলছে, বায়ু দূষণ রোধ করতে পারলে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়বে এক বছর তিন মাসের বেশি। দ্বিতীয়ত, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করা যাবে। তৃতীয়ত, রোগ সংক্রমণ থেকে রক্ষা, চতুর্থত, প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম নেয়ার সংখ্যা কমে যাবে, তেমনি শিশু ও মানুষের গড় আয়ু বাড়বে। পঞ্চমত, অর্থনৈতিক সুবিধা : বায়ু দূষণ কমানো গেলে একদিকে যেমন মানুষের অসুস্থতা কমবে, গড় আয়ু বাড়বে, সময় সাশ্রয় হবে, পাশাপাশি বেড়ে যাবে জিডিপিও।
দূষণ রোধে কর্তৃপক্ষের জোরালো পদক্ষেপের অভাবে বায়ু দূষণের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আসছে না বলে মনে করেন তাঁরা। তাঁরা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠা, শহরের চারপাশে ইটভাটা, শহরের মধ্যে নানা কারখানা স্থাপন তো বায়ু দূষণের একটি কারণ। সেই সঙ্গে শহরের প্রচুর ধুলা এবং নির্মাণ কাজের বায়ু দূষণ হচ্ছে। ট্রাফিক জ্যামের কারণে গাড়িগুলো রাস্তায় অতিরিক্ত সময় ধরে চলছে, সেগুলো অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ করছে, এসবও বায়ু দূষণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। বায়ু দূষণের কারণে পরিবেশ অতিরিক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে, সেই গরম ঠাণ্ডা করার জন্য মানুষ অতিরিক্ত এসি ব্যবহার করছে, আবার তাতে বায়ু দূষণ আরো বাড়ছে। এর জন্য প্রত্যক্ষ ব্যবস্থাগুলো হলো রাস্তায় পানি দিয়ে ধুলা নিয়ন্ত্রণ বা ময়লাগুলো পুড়িয়ে ফেলার মতো নানা ব্যবস্থা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বায়ুদূষণ রোধে আমাদের কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে, সবার আগে দূষণের উৎসগুলো চিহ্নিত করে দূষণ কমিয়ে আনতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চালানো বন্ধ করতে হবে। ফিটনেসবিহীন যানবাহন ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। সমন্বয়হীনভাবে রাস্তার খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করতে হবে। সেবাদানকারী সংস্থার সংস্কার কাজে সমন্বয় এনে স্বল্প সময়ে সংস্কার শেষ করতে হব। নির্মাণসামগ্রী উন্মুক্তভাবে ফেলে রাখা যাবে না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে, যাতে করে যেখানে সেখানে নগর বর্জ্য বা কৃষি বর্জ্য উন্মুক্তভাবে পোড়ানো না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। অন্যদিকে প্রচলিত আইনকে যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে। একইসঙ্গে প্রশাসনিক ব্যবস্থার সফল প্রয়োগ একান্তভাবে প্রয়োজন। মোট কথা, ধূলাবালি থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধখ্রি. পূ. ৬৩২ জোরাস্থীয় পঞ্জিকা (ইরানে ও ভারতীয় পারসিক সমাজের প্রচলিত) প্রবর্তিত হয়।