দূরের দুরবিনে

অজয় দাশগুপ্ত | শুক্রবার , ২৮ জানুয়ারি, ২০২২ at ৮:১৩ পূর্বাহ্ণ

হঠাৎ করে দেশের ভাবমূর্তি নিয়ে সংকট তৈরী হয়ে গেছে। সত্যি কি হঠাৎ করে হচ্ছে সবকিছু? না এটা অনেক দিনের কোনো চেষ্টা বা ভুলের ফসল? বাংলাদেশের র‌্যাব ও বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সময় সাপেক্ষ এবং জটিল হবে ধারণা করছেন মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সামনে রেখে দেয়া এ বিধিনিষেধ প্রত্যাহারে বাংলাদেশ সরকারের নানামুখী তৎপরতা চালাতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অবস্থানরত মার্কিন নীতি বিশ্লেষক প্রশান্ত পরমেশ্বরণ বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞা এবং এটি প্রত্যাহারের ব্যাপারটি মার্কিন স্বার্থ এবং ভূরাজনৈতিক জটিল সমীকরণের অংশ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘বিধিনিষেধ আরোপ সহজে হলেও এটি প্রত্যাহার বেশ কঠিন বিশেষকরে ট্রেজারি যখন সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে মনোনীত করে দেয়। সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা আচরণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অর্থ এটি মোকাবেলার জন্য নির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ লাগবে। এছাড়া আমার সন্দেহ, যেহেতু আরো কিছু দেশের সঙ্গে একসাথে এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে, তাই এটি অন্যান্য দেশের সাথে একত্রে পর্যালোচনা করতে হবে। আমি মনে করি এটি হলো বড় চ্যালেঞ্জ’।

কথা হচ্ছে সরকারের এত উন্নয়ন অগ্রযাত্রা আর দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর ও আজ আমাদের এসব কথা শুনতে হচ্ছে কেন? কি হবার কথা আর কি হচ্ছে? গত কয়েকবছর ধরে আমরা যারা দেশের বাইরে থকে বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি ক্রমাগত ভাবে বাধার সমুখীন হয়েছি। বলতে না দেয়ার সংস্কৃতি বাংলাদেশে সবসময় সচল। কিন্তু বিগত বছর গুলোতে তা গোপনে ও নীরবে এতো বেশী বেড়েছে যে সকলেই জানেন কি বলতে হবে আর কি বলতে হবে না। সমপ্রতি জনপ্রিয় একটি টক শোতে অংশ নিয়ে বলেছিলাম সময় খুব দূরে না যা আমাদের ভাবমূর্তি কে আঘাত করবে। আর তার প্রভাব পড়বে বিদেশে শান্তি মিশনে বাহিনী পাঠানোর ওপর। সে আশংকা সত্য হতে চলেছে। আজ খবরে দেখলাম: ‘জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশের আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাবকে বাদ দিতে ১২টি মানবাধিকার সংস্থা চিঠি দিয়েছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বিভাগের আন্ডারসেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়ের ল্যাক্রোক্সর নামে সংস্থাগুলো গত বছরের ৮ নভেম্বর গোপনে চিঠিগুলো পাঠায়। আজ বৃহস্পতিবার চিঠির বিষয়টি প্রকাশ্যে এল। এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। তবে এখনো পর্যন্ত চিঠির জবাবে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বিভাগ।

চিঠিতে স্বাক্ষর করা সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছেঅ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স (এএফএডি), এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ফোরামএশিয়া), এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এএনএফআরইএল), ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, সিভিকাস: ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ(এইচআরডব্লিউ), ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস, দ্য অ্যাডভোকেটস ফর হিউম্যান রাইটস এবং ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার (ওএমসিটি)।’ তথ্য : আজকের পত্রিকা।

এত সব ঘটে চলেছে অথচ সরকারের কোন মহল তা জানে না? গোয়েন্দা সংস্থা দেশে বিদেশে সরকারের লবিং বা লবিষ্টদের কি খবর? তারা কি জেগে ঘুমাচ্ছেন? তা ছাড়া কথায় কথায় লন্ডনে বসে ষড়যন্ত্র না করার জন্য হেদায়েত করা সেসব আওয়ামী লীগার রা এখন কোথায়? আমরা এই সিডনি শহরে মাত্র ৫০ হাজার বাংলাদেশী যেদিকে তাকাই খালি আওয়ামী লীগ দেখি। বিগত বছর গুলিতে একের পর এক আওয়ামী লীগের জন্ম আর ভাঙ্গন দেখছি আমরা। মজার বিষয় কার্যত কোন বিএনপি জামাত মাঠে নাই। শুধু আওয়ামী লীগ আর তাদের ভাঙ্গা দল উপদল। এখন তারাই একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করে। কুৎসা রটায়। আর কারো দরকার পড়ে না। কিন্তু মজার বিষয় এই মাঠে না থাকা বিএনপি আর জামাত ই কিন্তু নীরবে শক্তিশালী।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনের এই বাস্তবতা এখন দেখছি সর্বত্র। এমন কি মুরুববী দেশ আমেরিকার সরকার প্রশাসন জাতিসংঘে ও তাই। তাহলে উন্নয়নের নামে যে প্রচার আর যে সব লবিং তার পেছনে টাকা ঢালার মানে কি? এটা তো সবাই জানেন শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশকে কোন অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে। কোথা থেকে কোথায় পৌঁছে গেছে দেশ। আজকের প্রজন্ম সুখ স্বাছন্দ্য আর বিলাসিতায় বড় হ ওয়া এক প্রজন্ম । আজকের বাংলাদেশ নানা দিক থেকে শক্তিশালী। পাশের বড় দেশ ভারতের উন্নয়নকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে চলা দেশের নেত্রী ও লৌহকঠিন। তাঁর দূরদর্শিতা আর সাহস ছাড়া দেশ এগুতে পারতো না। এতো কিছুর পর ও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিপন্ন হবার কারণ কি আমাদের অজানা?

বছরের পর বছর দেশ শাসনে থাকতে ধাকতে আওয়ামী লীগারদের মনে হচ্ছে এটা চিরকালীন। তারা রাজনীতি ভুলে গেছে। খেয়াল করবেন এই বিশাল দলটির প্রবীণ নেতারা এখন অন্তরালে। আড়ালে চলে গেছেন বিজ্ঞ আর ঝানু নেতারা। তাঁদের জায়গায় নবীন নেতারা আসলেও কোনো কথা ছিলো না। সে জায়গা দখল করে নিয়েছে আমলা আর মোসাহেবের দল। এইসব আমলারা নিশ্চয়ই লেখাপড়া জানা এবং আমলাতন্ত্রে পারদর্শী। তাদের দিয়ে দশ চালাবে রাজনীতি এটাই নিয়ম। কিন্তু যখন থেকে রাজনীতি একমুখি আর একতরফা হতে শুরু করলো ভোটহীন নির্বাচন একের পর এক সরকার গঠনে সাহায্য করলো তখন থেকে রাজনীতি পিছু হটতে হটতে আজ তার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।

আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র আজ মুখোমুখি। সেটা দেশের আমলাতন্ত্র বা বাহিনী নির্ভরতার কারণে হোক আর যে কারণেই হোক এর কারণেএখন দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা এমন কি শান্তি বা ভাবমূর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ।

বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর দেশ। বাংলাদেশ তিরিশ লাখ শহিদের দেশ। এই দেশ রক্ত আর ত্যাগের দেশ। এর প্রটি কণায় লেগে আছে পবিত্র সব মানুষের আত্মার পরশ। সরকার রাজনীতি কিংবা পাওয়ার এসব সাময়িক। মূলত আমাদের দেশের শক্তিই হচ্ছে মানুষের জাগরণ। সে জায়গাটা স্তব্ধ করে দেয়ার কারণেই আজ এমন অবসহা দেখতে হচ্ছে। যখন আমরা গরীব ছিলাম আমাদের সমস্যা ছিলো অনেক কিন্তু ভাবমূর্তি ছিল উজ্জ্বল। সরকারের সবকিছুই ম্লান করে দিচ্ছে এসব অপকর্ম। সাবধান হবার পাশাপাশি গণতন্ত্র ভোটাধিকার ও জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার বিকল্প নাই হাতে। সময় বহিয়া যায়

লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট

পূর্ববর্তী নিবন্ধজুম্’আর খুতবা
পরবর্তী নিবন্ধ‘থেরি’ বাংলা ভাষায় আসছে ‘সিংহপুরুষ’ নামে