সংকটে শিক্ষা, সংকট কাটাবে মেধা
এমন ঘোর সংকট একাত্তরেও আসে নি। লেখাপড়া বন্ধ প্রায়। কতোদিন যে এভাবে চলবে কেউ জানে না। যতোই তারিখ দেয়া হোক পরিস্থিতি খারাপ হলে ফের বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ সন্তানদের কোথাও পাঠাবে না। তাই পরীক্ষা হওয়া না হওয়ার চাইতেও শিক্ষা এখন মূল বিষয়। কিন্তু সামনে চলে আসছে পরীক্ষা।
এইচ এস সি পরীক্ষা হবে না। দীপু মনি’র এই ঘোষণার ভেতর স্বস্তি যতোটা ভাবনাও কিন্তু ততোটা। করোনাকালে উন্নত নামে পরিচিত দেশগুলো কি করেছে সেটা একটু দেখে নিয়ে তারপর বলি ভাবনা কেন এবং কি তার কারণ।
করোনা ছাত্রছাত্রীদের কতোটা খারাপ রেখেছে বা তাদের মনে কি ভাবে আঘাত হেনেছে তা নিয়ে জাতির মাথাব্যথা আছে এমন কোন নজীর নাই। বরং চাকরি বিদেশ যাওয়া ধর্ষণ লুটপাট এসব নিয়েই ব্যস্ত মানুষ। এর ফাঁকে বাচ্চারা বড়োরা পরীক্ষা নিয়ে কি ভাবে বা কি হবে তাদের তা যেন গড়িয়ে পড়ে গেছে কোথাও। কতোদিন সব বন্ধ এর মানসিক প্রভাব নিয়েও কারো কোন উচ্চবাচ্য নাই।
সিডনি তথা অস্ট্রেলিয়ায় একটি দিনের জন্যও স্কুল বন্ধ হয় নি। ইউনিভার্সিটিগুলো খোলা বা বন্ধ এ ভাবে চললেও স্কুল চলেছে। এর দুটো কারণ,
এক. এখানে যৌথ পরিবার নাই বললেই চলে। থাকলেও দায় দায়িত্ব নেয়ার মানুষ কম। পরিবারের উপার্জন ও আয়ের মানুষেরা ছুটি নিতে বাধ্য হলে চাকরি থাকবে? আর এমন লাখ লাখ কাজ আছে যাতে গেলে মাইনে না গেলে নাই কোন মাইনে। তারা বাঁচবেন কি করে?
দুই. এ দেশে স্কুল মানে বিশাল মাঠ, অনেকগুলো ভবন, খালি জায়গা ও কম সংখ্যক ছাত্র ছাত্রী। তাদের গাদাগাদি করে বসতে হয় না আসতে যেতেও হয় না। মা বাবা বা তেমন কেউ গাড়ি করে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি করেই নিয়ে আসে। ফলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সহজ।
তাই অর্থনীতি সচল রাখতে ও শিক্ষা সমুন্নত রাখতে স্কুলগুলো খোলাই ছিলো। এখন এখানে চলছে এইচ এস সির তোড়জোড়। অন লাইনে এবং সরাসরি মোটামুটি সবগুলোই চালু।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় পরীক্ষা নেয়া অসম্ভব। তাই এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতেই হয়। পাশাপাশি যেটা ভাবনার বিষয় করোনা একদিন চলে যাবে সেদিন যেন এদের জীবনে এই সময়কাল অভিশাপ হয়ে না থাকে। মনে পড়ে স্বাধীনতার পর পর ঢালাও নকল সেশনজট এসব থামাতে পাসের হার ১ থেকে ২ পার্সেন্টে নামিয়ে আনায় কতো জীবনের বারোটা বেজে গিয়েছিল। কে তাদের কথা মনে রাখে? আজকের বাংলাদেশ অনেক উন্নত। ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল সুবিধা সাথে আর্থিক প্রগতি অনেক কিছু সহজ করে দিয়েছে। ফলে দেশ বিদেশের খবরাখবর নিয়ে কোন একটি ব্যবস্থা নিলেই কেবল তা ভবিষ্যতে ভালো ফল দিতে পারবে।
যেটা সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ, বিদেশে পড়াশোনা করতে আসা। এটি এখন নিয়ম এর ভেতরে মেধা বিনিময় ও ভালো মেধা পাবার সুযোগ থাকে। আগেই বলেছি বিদেশে পড়াশোনা বন্ধ হয় নি। নানা কৌশলে তা করিয়ে নেয়া হচ্ছে। দেশেও হচ্ছে। কিন্তু দেশে কতোটা সমন্বয় ও কতোটা মানসম্মত কিছু হচ্ছে সেটাই প্রশ্ন।
এটা ঠিক করতে না পারলে অন্তত এক জেনারেশানের কপালে বিপদ থাকবে। করোনার ভেতরে যে সব চ্যালেঞ্জ এটি তার একটি। পা ফসকে যাওয়া কোন জাতির জন্য কেউ অপেক্ষা করবে না।
তাই সরকার ও শিক্ষামন্ত্রণালয়ের প্রতি অনুরোধ, দয়া করে তাড়াতাড়ি তাড়াহুড়ো করে কোন কাজ করবেন না। এমনিতেই শিক্ষা ব্যবস্থা বারোটা বাজার পথে। দেশজুড়ে নৈতিক অবক্ষয় চরমে। এর ভেতর করোনা। ফলে বুঝে শুনে বিদেশের সাথে কথা বলে নিয়ম ঠিক করুন। যাতে এরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে ছিটকে না পড়ে।
সিডনিতে যা দেখছি তার সাথে মিলিয়ে হতাশ হবো না। তবে এটা নিশ্চিত ইচ্ছা থাকলেও দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় তেমন কোন পরিবর্তন আনতে পারে নি সরকার। ফলে মানহীন হতশ্রী শিক্ষা আরো একটি বড় বিপদ দেখছে তার সামনে। এর উদ্ধার এর বিহিতে জাতির কল্যাণ ও ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে এটা নিশ্চয়ই বুঝিয়ে বলার দরকার পড়ে না।
লেখক : কবি, শিশুসাহিত্যিক ও কলাম লেখক