দূরপাল্লার বাস চলাচল এবং হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়ার অনুমতি দিয়ে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। গতকাল রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় পূর্বের সকল বিধিনিষেধের ধারাবাহিকতায় নতুন শর্ত যুক্ত করে এর মেয়াদ ২৩ মে মধ্যরাত থেকে ৩০ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এছাড়া আজ সোমবার থেকে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল করবে। খবর বিডিনিউজের।
নতুন শর্তে বলা হয়েছে, আন্তঃজেলা বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে। তবে অবশ্যই যাত্রীসহ সবাইকে মাস্ক পরার পাশাপাশি সকল স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। ঈদের আগে জেলার ভেতর অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলেও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। ঈদের পর লকডাউনের মেয়াদ এক সপ্তাহ বাড়ানো হলে দূরপাল্লার বাসের বিধিনিষেধও বহাল রাখা হয়েছিল।
গতকাল প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, হোটেল-রেস্তোরাঁ ও খাবার দোকানগুলো আসন সংখ্যার অর্ধেক সেবাগ্রহীতাকে সেবা দিতে পারবে। এতদিন খাবারের দোকানে বসে খাওয়ার অনুমতি ছিল না। তবে খাবার বিক্রি বা সরবরাহ (টেকওয়ে বা অনলাইন) করার সুযোগ ছিল।
মহামারী বিস্তারের ঊর্ধ্বগতি রোধে কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় ধাপে ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে জরুরি কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যা ‘সর্বাত্মক’ লকডাউন নামে পরিচিতি পায়। এই বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস আগের মতোই বন্ধ আছে। তবে উৎপাদনমুখী শিল্প কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালানোর অনুমতি রয়েছে। সর্বাত্মক লকডাউন শুরুর পর আন্তঃজেলা বাসের পাশাপাশি ট্রেন ও লঞ্চ চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়। রোজার আগে বিধিনিষেধ শিথিল করে দোকানপাট ও শপিংমল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এখনও সেই নিয়মই বহাল আছে।
অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে চলবে ট্রেন : মহামারী নিয়ন্ত্রণের বিধিনিষেধে সাত সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর আজ সোমবার থেকে অর্ধেক আসনে যাত্রী নিয়ে আবারও গন্তব্যে ছুটবে ট্রেন। রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, সোমবার থেকে সারা দেশে ২৮ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন, ৯টি মেইল এক্সপ্রেস ও কমিউটার ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। এসব ট্রেনের অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখা হবে এবং সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
গতকাল রেল ভবনে এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ ঘোষণা দেন বলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল আলম। তিনি বলেন, অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে সোমবার থেকে অনলাইনে টিকেটও বিক্রি করা হবে। ২৮ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন কোন কোন রুটে চলাচল করবে তা ইতোমধ্যে রেলওয়ে ওয়েবাসাইটে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে গত ৫ এপ্রিল সরকার লকডাউনের বিধিনিষেধ আরোপ করলে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজ থেকে চলবে লঞ্চ : করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে লকডাউনে সাত সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর আজ সোমবার থেকে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে লঞ্চ চলাচল করবে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, সোমবার থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করবে। তবে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিতে হবে এবং স্বাস্থ্য বিধি মানতে হবে। এই নিয়ম না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিআইডব্লিউটিএর একজন কর্মকর্তা জানান, সদরঘাট থেকে প্রতিদিন ৮০টির বেশি লঞ্চ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৪৩টি রুটে ছেড়ে যায়।