দূরদর্শী এ পরিকল্পনার জরুরি বাস্তবায়ন চাই

সর্বজনীন পেনশন

| রবিবার , ৬ মার্চ, ২০২২ at ৮:০৪ পূর্বাহ্ণ

সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য অর্থ বিভাগকে সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা’ সংক্রান্ত কৌশলপত্র উপস্থাপনকালে এ নির্দেশ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় এ কৌশলপত্রের ওপর বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউসসহ সংশ্লিষ্ট অন্য সচিবরা এ সময় সেখানে ছিলেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশের আপামর জনগণের জন্য বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইশতাহারে একটি সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের অঙ্গীকার করা হয়। সে আলোকে এ কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। এজন্য আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বিবেচনা করা হয়েছে। এর আগে জাতীয় বাজেটেও ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল সর্বজনীন পেনশনের। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, দেশে গড় আয়ু ও প্রবীণের সংখ্যা বাড়ায় সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিও বাড়ছে। ফলে সর্বজনীন পেনশন সুবিধার প্রয়োজনীয়তা বেড়ে চলেছে। সরকারের অনুমোদিত এক বা একাধিক কোম্পানির মাধ্যমে এসব তহবিল পরিচালিত হবে। সর্বজনীন পেনশন হতে পারে ‘অংশীদারত্বের ভিত্তিতে’।
পত্রিকান্তরে প্রস্তাবিত সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য ২১টি দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। এগুলো হচ্ছে- ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব কর্মক্ষম নাগরিক সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন; বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীগণও এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন; সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীদের আপাতত নতুন জাতীয় পেনশন-ব্যবস্থার বাইরে রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে তাঁদের বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে; জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে দেশের ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিক পেনশন হিসাব খুলতে পারবেন; প্রাথমিকভাবে এ পদ্ধতি স্বেচ্ছাধীন থাকবে, যা পরবর্তী সময়ে বাধ্যতামূলক করা হবে; ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়া সাপেক্ষে মাসিক পেনশন পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন; প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি আলাদা পেনশন হিসাব থাকবে। ফলে চাকরি পরিবর্তন করলেও পেনশন হিসাব অপরিবর্তিত থাকবে; সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। তবে এ ক্ষেত্রে কর্মী বা প্রতিষ্ঠানের চাঁদা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে দেবে; মাসিক সর্বনিম্ন চাঁদার হার নির্ধারিত থাকবে। তবে প্রবাসী কর্মীরা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা জমা দিতে পারবেন; সুবিধাভোগীরা বছরে ন্যূনতম বার্ষিক জমা নিশ্চিত করবেন, অন্যথায় তাঁর হিসাব সাময়িকভাবে স্থগিত হয়ে যাবে এবং পরবর্তী সময়ে বিলম্ব ফিসহ বকেয়া চাঁদা দেওয়ার মাধ্যমে হিসাব সচল করতে হবে; সুবিধাভোগীরা আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তিতে চাঁদা হিসেবে বাড়তি অর্থ (সর্বনিম্ন ধাপের অতিরিক্ত যেকোনো অঙ্ক) জমা করতে পারবেন; পেনশনের জন্য নির্ধারিত বয়সসীমা অর্থাৎ ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত লভ্যাংশসহ জমার বিপরীতে নির্ধারিত হারে পেনশন দেওয়া হবে; পেনশনধারীরা আজীবন অর্থাৎ মৃত্যুর আগপর্যন্ত পেনশন-সুবিধা ভোগ করবেন; নিবন্ধিত চাঁদা জমাকারী পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে জমাকারীর নমিনি বাকি সময়কালের (মূল জমাকারীর বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত) জন্য মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন; পেনশন কর্মসূচিতে জমা করা অর্থ কোনো পর্যায়ে এককালীন উত্তোলনের সুযোগ থাকবে না। তবে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জমা করা অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে উত্তোলন করা যাবে, যা সুদসহ পরিশোধ করতে হবে; কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে নিবন্ধিত চাঁদা দানকারী মারা গেলে জমা করা অর্থ মুনাফাসহ তাঁর নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে; পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে প্রভৃতি।
আমাদের দেশে সামাজিক নিরাপত্তা অত্যন্ত সীমিত ও দুর্বল। সরকারি কিছু উদ্যোগ ছাড়া এখানে অন্যান্য পদ্ধতি যেমন পেনশন, ইন্স্যুরেন্স, বিশেষ করে বেসরকারি খাতের জন্য নেই বললেই চলে।
অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশেও মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। বাড়ছে বয়স্ক মানুষের হারও। তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। যদি এই ব্যবস্থা সুচারুভাবে করা যায় তা হলে সামাজিক নিরাপত্তা অনেকটাই নিশ্চিত করা যাবে। তাঁর মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এই সর্বজনীন পেনশনের উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। আমরাও এই দূরদর্শী পরিকল্পনার জরুরি বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে