দূতাবাস বন্ধ করবেন না

রাশিয়াকে অনুরোধ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের

| বুধবার , ৮ জুন, ২০২২ at ১১:২১ পূর্বাহ্ণ

ইউক্রেনে যুদ্ধকে ঘিরে সৃষ্ট সংকট সত্ত্বেও মস্কোর মার্কিন দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়া রাশিয়ার উচিত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন দেশটিতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জন জে সুলিভান। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে অবশ্যই কথাবার্তা হতে হবে, বলেছেন তিনি। সোমবার রুশ বার্তা সংস্থা তাসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডনাল্ড ট্রাম্প আমলে নিয়োগ পাওয়া সুলিভান এসব বলেছেন। খবর বিডিনিউজের।

ইউক্রেনে আক্রমণকে রাশিয়ার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ মনে করার পাশাপাশি একে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের হেজিমনির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হিসেবেই দেখছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্‌লাদিমির পুতিন। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে ক্রমাগত অপমান করে গেছে বলেও মনে করেন ক্রেমলিনপ্রধান। ইউক্রেন ও এর পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার আক্রমণকে দেখছে বেপরোয়া সাম্রাজ্যবাদী ভূমি দখলের চেষ্টা হিসেবে। দুই পক্ষের এই লড়াই এরই মধ্যে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, উদ্বাস্তু করেছে কোটির বেশি মানুষকে। মস্কো-ওয়াশিংটনের এ বৈরিতা সত্ত্বেও কারওই অপর পক্ষের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত হবে না বলে মনে করেন সুলিভান।

একে অপরের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ রাখতে হবে আমাদের, তাসকে এমনটাই বলেছেন তিনি। পশ্চিমা লাইব্রেরিগুলো থেকে লিও তলস্তয়ের কাজ সরিয়ে দেওয়া এবং বিখ্যাত রুশ সুরকারদের সুর বাজানো বন্ধের ব্যাপারে সতর্কও করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৩৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর এমনকী স্নায়ুযুদ্ধকালীন গুপ্তচরগিরি ও তুমুল উত্তেজনার মধ্যেও মস্কো ও ওয়াশিংটন কখনোই একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি। রাশিয়া এখন বলছে, সোভিয়েত পরবর্তী সময়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে তাদের যে আগ্রহ ছিল তা শেষ হয়ে গেছে, তারা এখন প্রাচ্যের দিকে মুখ ঘোরাবে। গত মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন, তিনি টেইলর সুইফটের ‘উই আর নেভার এভার গেটিং ব্যাক টুগেদার’ গানটি পুতিনকে উৎসর্গ করতে চান।
এ প্রসঙ্গে সুলিভানকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমরা পুরোপুরি সম্পর্ক ছিন্নও করতে পারবো না। পাল্টাপাল্টি এই রেষারেষিতে দুই দেশের দূতাবাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন এ রাষ্ট্রদূত বলেন, হতে পারে, সম্ভাবনা আছে, যদিও তেমনটা হলে তা বড় ভুল হবে বলে মনে করি আমি। আমেরিকা স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর রুশ সম্রাজ্ঞী ক্যাথরিন দ্য গ্রেট ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতি সমর্থন জানাতে রাজি হননি, যা যুক্তরাষ্ট্র ও তখনকার রুশ সাম্রাজ্যের রাজধানী সেইন্ট পিটার্সবার্গের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের গোড়াপত্তন করেছিল।

১৯১৭ সালের অক্টোবরে বলশেভিক বিপ্লবের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট উইড্রো উইলসন ভ্‌লাদিমির লেনিনের বিপ্লবী সরকারকে স্বীকৃতি দিতে অসম্মতি জানান এবং তারই ধারাবাহিকতায় ১৯১৯ সালে রাশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৩৩ সালে ওই সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। দুই দেশের সম্পর্ক কীভাবে ভালো হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ৬২ বছর বয়সী আইনজীবী সুলিভান বলেন, কীভাবে হবে তা তিনি জানেন না, তবে একদিন সৌহার্দ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে বলেই তার আশা। যদি বাজি ধরতে বলা হয়, আমি বলবো, সম্ভবত আমার জীবদ্দশায় এমনটা হবে না, বলেছেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিএসইতে লেনদেন ৩৫.০৮ কোটি টাকা
পরবর্তী নিবন্ধমমতার বিরুদ্ধে কটূক্তি, গ্রেপ্তার রোদ্দুর রায়