দুশ্চিন্তা কেটেছে ৬৪ হাজার কৃষক পরিবারের

১৯,৫০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা চকরিয়ায়

ছোটন কান্তি নাথ | শনিবার , ৫ আগস্ট, ২০২৩ at ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ

চকরিয়ায় একদিকে অনাবৃষ্টি, অন্যদিকে লবণাক্ত পানির প্রভাবে আমন আবাদের শুরুতে মিঠাপানির সেচ দেওয়া নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ছিলেন উপজেলার প্রায় ৬৪ হাজার কৃষক পরিবার। গত বছরের মতো এবারও এই আবাদের শুরুতে বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় ফসলি জমির মাটি ফেটে চৌচির অবস্থা হয়ে পড়ে। এতে কৃষি বিভাগ এবং ভুক্তভোগী কৃষকের মাথা থেকে যেন দুশ্চিন্তা যাচ্ছিল না। গত কয়েকদিনের মাঝারি বৃষ্টিপাতে একেবারে দূর হয়েছে জমিতে সেচ সমস্যা নিয়ে দেখা দেওয়া দুশ্চিন্তা। একনাগাড়ে কয়েকদিনের এই বৃষ্টিপাত যেন কৃষকের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এতে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ১৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ধানের চারা রোপণের ধুম পড়ে গেছে। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্তও চলছে চারা রোপণ। উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছেপ্রতিবছরের মতো এবারও উপজেলার আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে।

কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ইতোমধ্যে ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে রোপন সম্পন্ন হয়ে গেছে ধানের চারা। বাকি জমিতেও ধানের চারা রোপণ চলছে। কৃষি বিভাগের ব্লক ভিত্তিক নিয়োজিত কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে মাঠে বেশ তৎপর রয়েছেন।

উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজীব দে দৈনিক আজাদীকে জানান, প্রতিবছর আমন মৌসুমে ধান ও সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় বীজ, সার, কীটনাশক, কৃষি উপকরণসহ বিভিন্নভাবে কৃষকদের কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হয়ে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এসব প্রণোদনা সহায়তা পাওয়ার পরও প্রয়োজনীয় মিঠা পানির অভাবে কৃষক ধান ও সবজি উৎপাদনে মাঠে নামতে পারছিল না। তবে কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে সেচ সমস্যা নিয়ে দেখা দেওয়া দুশ্চিন্তা কেটে গেছে কৃষকের।

রাজীব দে আরও জানানপ্রতি বছরের মতো এবারও আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। তন্মধ্যে উফসি প্রজাতির ব্রিধান ৭৫, ৭১, ৫১, ৯৫ এবং হাইব্রিড প্রজাতির টিয়া, মুক্তি, হীরা ধানের আবাদ করা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, চকরিয়া উপজেলাটি পার্বত্য অববাহিকার মাতামুহুরী নদীবেষ্টিত। তাই নদীর দুই পয়েন্টে নির্মিত রাবার ড্যামের (ব্যারেজ) সহায়তায় উজান থেকে নেমে আসা মিঠাপানি ধরে রেখে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমেও ব্যাপক খাদ্যশস্য উৎপাদন করে থাকেন এখানকার প্রায় ৬৪ হাজার কৃষক পরিবার। কিন্তু বর্ষামৌসুম শুরুর আগেই নদীর রাবার ড্যাম দুটি খুলে দেওয়া হয়। এছাড়া সরাসরি সমুদ্রের সঙ্গে মিলিত থাকায় আমন মৌসুমেও সামুদ্রিক অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ভরে উঠে মাতামুহুরী নদী এবং অসংখ্য ছড়াখাল। এই কারণে বর্ষা মৌসুমে আমন আবাদে একমাত্র নির্ভর থাকতে হয় বৃষ্টিপাতের ওপর। কিন্তু বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হওয়া নিয়ে কৃষকের মতো আমাদেরও বেশ দুশ্চিন্তা ছিল।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত সেই দুশ্চিন্তা কেটে গিয়ে এখন মাঠে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। আশা করা যাচ্ছে, বৃষ্টিপাত আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। সেই সাথে আমন আবাদের লক্ষ্যামাত্রাও অর্জিত হবে নিঃসন্দেহে।

কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন জানান, উপকূলীয় ইউনিয়নগুলোর আবাদী জমিতে লবণ পানির আধিক্য ঠেকাতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে স্লুইস গেটের। কিন্তু স্লুইস গেটগুলো একেবারে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় প্রতিনিয়ত লবণ পানি ঢুকছেই। তাই আগামীতে এসব স্লুইস গেট টেকসই ও স্থায়ীভাবে মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে লিখিতভাবে জানানো হবে। যাতে কৃষকের এই সমস্যা দূরীভূত হয়।

সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, ফসলি জমিতে দলবদ্ধ কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। বৃষ্টিপাতের মধ্যেও ধানের চারা রোপণে তারা কাজ করছেন। এমনকি গভীর রাত অবদিও অনেক স্থানে কৃষকেরা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মাঠে তৎপর রয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাদুরতলায় মুনিরীয়া যুব তবলীগের এশায়াত মাহফিল
পরবর্তী নিবন্ধদেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে আবারো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পেতে চায়