পাহাড়ের নিচে বয়ে গেছে বুনো ঝিরি। গ্রীষ্মের খরতাপেও ঝিরিতে বয়ে যাচ্ছে শীতল জল। ঝিরির পাশেই জারুলের বড় বন। এক সাথে অন্তত কয়েকশ জারুল গাছ। পুরো বাগানজুড়ে বেগুনি জারুলের উচ্ছ্বাস।
খাগড়াছড়ি–রাঙামাটি সড়কের ক্যাংগালছড়ি বেইলি ব্রিজের পাশেই বিশাল জারুলের বাগান। পাশেই ছোট একটা বাজার। কয়েকটা বসতিও রয়েছে। বন বিভাগের জায়গায় জারুলের বিশাল বনটি গড়ে তুলেছে ক্যাংগালছড়ি রেঞ্জ। এতো বড় জারুলের বন এবার প্রথম দেখা। বেগুনি রঙের ঠাসা বাগানে আলাদা করে নজর কেড়েছে সাদা জারুল। পুরো বাগানে ৩ থেকে ৪টি গাছে সাদা জারুল ফুটেছে। এই মৌসুমে আর কোথাও সাদা জারুল দেখা যায়নি।
সাদা জারুল দুর্লভ ফুল। বেগুনি রঙের জারুল যেভাবে সর্বত্র দেখা যায়, সাদা জারুল দেখা যায় কদাচিৎ। জারুলের বনে প্রবেশ করে দেখা যায় বেগুনি ফুলের পাঁপড়ির সাথে পরে আছে সাদা জারুলের পাঁপড়ি। সাদা জারুল ফুলে বাগানটি আরো স্বতন্ত্র ও নান্দনিক হয়ে উঠেছে। সড়কের পাশে এতো বড় জারুলের বন দেখে মুগ্ধ হয় পথের পথিক। অনেকে আবার প্রথম সাদা জারুল দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন।
কবি জীবনানন্দ দাশ জারুলের কথা তাঁর কবিতায় লিখেছেন, এই পৃথিবীর এক স্থান আছে–সবচেয়ে সুন্দর করুণ, সেখানে সবুজ ডাঙ্গা ভরে আছে মধুকুপী ঘাসে অবিরল, সেখানে গাছের নাম: কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল।
সাদা জারুলের সাথে বেগুনি জারুলের পার্থক্য রঙ ও সহজলভ্যতায়। বেগুনি জারুল সর্বত্র ফুটে থাকলেও সাদা জারুল খুবই কম দেখা যায়। জারুলের ইংরেজি নাম Giant Crape-myrtle, বৈজ্ঞানিক নাম Lagerstroemia speciosa। জারুল দেশীয় বৃক্ষ। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও চীন, মালয়েশিয়ায় জারুল দেখা যায়। বিল বা নদীর তীরবর্তী এলাকা, কৃষি জমি, পথের ধারে সর্বত্র জারল গাছ হয়। জারুল বৃক্ষ মাঝারি আকৃতির, প্রতিটি শাখায় ফুল ফুটে। জারুল পাতা ঝরা বৃক্ষ। বসন্তে এদের নতুন পাতা আসে। এরপর ফুল ফুটে। সাদা জারুল থোকায় থোকায় ফুটে। জারুল কাঠ লালচে রঙের, অত্যন্ত শক্ত ও মূল্যবান।
খাগড়াছড়ির নির্সগপ্রেমী ও হিল অর্কিড সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সাথোয়াই মারমা বলেন, বেগুনি জারুল সর্বত্র দেখা যায়। এবার খাগড়াছড়িতে প্রচুর জারুল ফুটেছে। সাদা জারুল কেবল এই ক্যাংগালছড়ির অশ্রেনীভুক্ত বনে দেখলাম। এটি বেশ দুর্লভ। অসংখ্যা বেগুনি জারুলের মাঝে সাদা জারুল খুবই নান্দনিক লাগছে। ফুলের গাছগুলো সংরক্ষণে বন বিভাগকে উদ্যোগ নিতে হবে।