দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতাকে আরও টেকসই করতে হবে

| শুক্রবার , ২৪ জুন, ২০২২ at ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি বলেন, অবকাঠামো থেকে শুরু করে সব কিছু আগামীতে পরিকল্পনা অনুযায়ী করতে হবে। বুধবার দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশাসনসহ আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী এবং সহযোগী সংগঠনের সবাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। আওয়ামী লীগ শুধু সরকারে থেকে না বিরোধী দলে থাকলেও যে কোনো দুর্যোগে সবার আগে মানুষের পাশে দাঁড়ায়।

তিনি বলেছেন, বন্যার পর কৃষকরা যেন কৃষিকাজ করতে পারেন সেজন্য বীজ, সারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর যেন মানুষের ক্ষতি না হয় সে বিষয়েও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে।

তিনি বলেন, মেঘালয় ও আসাম পাহাড়ি এলাকা। ফলে বৃষ্টির পানি দ্রুত ভাটির দিকে সমতল ভূমি সুনামগঞ্জ-সিলেটে প্রবেশ করে প্লাবিত করেছে। এ অঞ্চলের হাওর এবং নদীগুলোর স্বাভাবিক বন্যার পানি ধারণের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এত বিপুল পরিমাণ পানি ধারণ এবং পরিবহনের ক্ষমতা এসব হাওর বা নদীগুলোর নেই। ফলে পানি ফুলে-ফেঁপে উঠে গ্রাম, শহর, নগর, সড়ক-মহাসড়ক প্লাবিত করেছে। এবারের বন্যা স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহতম। বিগত একশ-সোয়াশ বছরের মধ্যে এত প্রলয়ঙ্কারী বন্যা হয়নি।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকানোর ক্ষমতা মানুষের নেই, সরকারেরও নেই। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমানো এবং দুর্ভোগ লাঘবে সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। কোনো সরকার সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে কি না সেটাই বিবেচ্য বিষয়।

বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, খরা প্রভৃতি এ দেশের মানুষের নিত্যসঙ্গী। প্রায় প্রতিবছরই বাংলাদেশে এরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটছে। ভৌগোলিক গঠন ও বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ১৯৭০ সালে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাসে প্রায় কয়েক লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়। ১৯৮৮ সালের বন্যায় প্রায় এক কোটি লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম কক্সবাজার সমুদ্র-উপকূলে প্রাণ হারায় প্রায় দেড় লাখ মানুষ। ২০০৭ সালে দেশে বন্যায় ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় সোয়া কোটি মানুষ। খেতের ফসল, বাড়িঘর, গবাদি পশু, গাছপালা সবই ধ্বংস হয়ে যায়। ভেঙে পড়ে দেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতি।

স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহতম এবারের বন্যায় ত্রাণ তৎপরতা চলছে অবিরাম। তাতে কিছুটা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ রয়েছে। কেননা, এখানে কারা ক্ষতিগ্রস্ত, তার কোনো তথ্য নেই। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, অনেকেই ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিচ্ছিন্নভাবে বন্যাকবলিতদের পাশে ত্রাণ নিয়ে শামিল হয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয়ভাবে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ থাকলে বিদ্যমান সব ধরনের অব্যবস্থাপনার সুযোগ থাকত না বললেই চলে। যিনি প্রকৃত প্রাপ্য, তিনি না পেয়ে অন্য কেউ পাওয়া, একজন বারবার পাওয়া, ত্রাণ চুরি যাওয়া প্রভৃতি সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে হলে কেন্দ্রীয় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই। আর এ জন্য যে বিষয়টি জরুরি, সেটি হলো জাতীয়ভাবে একটি ডাটাবেইস তৈরি করা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকানোর ক্ষমতা মানুষের নেই, সরকারেরও নেই। আসলে প্রকৃতি তার নিজের খেয়ালে চলে। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ করার শক্তি মানুষের হাতে নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্ধ এবং নিয়ন্ত্রণ করা একেবারেই অসম্ভব। তবে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। দুর্যোগ মোকাবেলা করার স্তুতি ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অনেক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এ জন্য গণসচেতনতা দরকার। আমরা জানি, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বর্তমান সরকার বিভিন্ন সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ সকল পদক্ষেপের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে জনগণের জন্য মানবিক এই সহায়তা আরো বাড়াতে হবে। দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতাকে আরও টেকসই করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে