দুর্ভোগ মাড়িয়ে বাড়ির পানে

ট্রেনে বাসে ঠাঁই নেই

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৩০ এপ্রিল, ২০২২ at ৭:৩৯ পূর্বাহ্ণ

ঈদযাত্রায় ট্রেন ও বাসে দুর্ভোগ মাড়িয়ে নাড়ির টানে বাড়ির পানে ছুটছে মানুষ। ভোর থেকে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড় চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে। একই দৃশ্য দেখা গেছে কদমতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে এবং স্টেশন রোড, বিআরটিসি এলাকার আন্তঃজেলার বাস কাউন্টারগুলোতে।

গতকাল সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ১৬টি ট্রেন যাত্রী নিয়ে দেশের বিভিন্ন রুটে ছুটে গেছে। কোনো ট্রেনেই তিল ধরনের জায়গা নেই। ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেসসহ চাঁদপুরগামী মেঘনা স্পেশাল১ ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। সকাল ৯টা ২০ মিনিটে বিজয় এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি ছেড়ে গেছে ১০টা ১৫ মিনিটে। অপরদিকে চাঁদপুরগামী মেঘনা স্পেশাল১ বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি ছেড়ে গেছে ১২টা ১০ মিনিটে। দ্বিগুণ যাত্রী নিয়ে যাওয়া এই ট্রেন দুটি ৪০ মিনিট থেকে ৫৫ মিনিট দেরীতে যাত্রা করায় ট্রেনের শত শত যাত্রী এই গরমে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন। সরেজমিনে সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ট্রেনে টিকিটের যাত্রীর চেয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়া যাত্রী ছিল বেশি। অগ্রিম টিকিট না পেয়ে কাউন্টার থেকে স্ট্যান্ডিং টিকিট নিয়ে ঈদযাত্রায় গন্তব্যে ছুটেছেন যাত্রীরা। ট্রেনে জায়গা না পেয়ে ছাদে করে গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করেছেন যাত্রীরা। জিআরপি পুলিশ এবং আরএনবির সদস্যরা যাত্রীদের ট্রেনের ছাদে উঠতে নিবৃত করেন।

এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলার রেলওয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী আজাদীকে জানান, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে, সেজন্য আমাদের জিআরপি পুলিশ তৎপর আছে। স্বস্তির ঈদযাত্রা যাতে নিরানন্দের না হয় এ জন্য আমরা ট্রেনের ছাদে ভ্রমণে যাত্রীদের সর্তক করছি। চট্টগ্রাম স্টেশনসহ প্রতিটি স্টেশনে জিআরপি পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে যাতে কেউ ট্রেনের ছাদে উঠে ভ্রমণ করতে না পারে। ফেনী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ফেনী স্টেশনে অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ময়মনসিংগগামী বিজয় এক্সপ্রেস, চট্টলা এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন ট্রেনের ছাদে ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণকারী ৩৭ জনকে ইএফটি মূলে ৮ হাজার ৪২০ টাকা জরিমানা আদায় করেন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২ মে সোমবার অথবা ৩ মে মঙ্গলবার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। তবে ২৯ রমজানে ঈদ হওয়ার সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করে আগামী ১ মে রবিবার থেকে ঈদের ছুটি শুরু হচ্ছে। এ জন্য গতকাল প্রতিটি ট্রেন যাত্রীতে ভরপুর ছিল। আজ শনিবার ও আগামীকাল রবিবার ঈদযাত্রার শেষ দিনে ট্রেনবাস সর্বত্র ভিড় আরো বাড়বে বলে জানান রেলওয়ে চট্টগ্রামের স্টেশন ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী।

চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী মফিজুল ইসলাম জানান, ৯টার আগে স্টেশনে এসেছেন। কিন্তু ট্রেন আসেনি। ট্রেন আসতে নাকি দেরী হবে।

সাইদুল ইসলাম নামে এক যাত্রী জানান, ময়মনসিংহ যাবো। অগ্রিম টিকিট পাইনি। এখন স্টেশনে এসেছি স্ট্যান্ডিং টিকিটে দাঁড়িয়ে হলেও বাড়ি যাওয়ার জন্য।

এদিকে অগ্রিম টিকিট না পাওয়া যাত্রীরা সকাল থেকে স্টেশনে ভিড় করেন। লক্ষ্য, যেকোনো ট্রেনে দাঁড়িয়ে হলেও গন্তব্যে যাওয়া।

এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী আজাদীকে জানান, সকাল থেকে সবকটি ট্রেন যথাসময়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে গেছে। তবে ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন এক ঘণ্টা দেরীতে ছেড়েছে এবং চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেস১ প্রায় ৪০ মিনিট দেরীতে গেছে। বাকি ট্রেনগুলো সঠিক সময়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে গেছে।

এদিকে ট্রেনের মতো বাস টার্মিনাল এবং কাউন্টার গুলোতেও দেখা গেছে যারা আগে টিকিটে পাননিতারা টিকিটের জন্য এক কাউন্টার থেকে অন্য কাউন্টারে ছুটছেন। তবে অনেককে তাদের কাক্সিখত রুটের টিকিট না পেতে দেখা গেছে। আবার যেসব কাউন্টারে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে নির্দিষ্ট দামের চেয়ে ৩ থেকে ৪শ’ টাকা অনেক ক্ষেত্রে ৫৬শ’ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দাম নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। ট্রেনের চেয়েও দূরপাল্লার বাসযাত্রীদের এবার ভোগান্তি বেশি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুই মাস পর আজ রাত থেকে ইলিশ ধরা শুরু
পরবর্তী নিবন্ধদুর্ঘটনা কেড়ে নিল প্রবাসীর জীবন