দুর্ভোগ মাড়িয়ে কর্মস্থলে ফেরা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৫ জুলাই, ২০২১ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

কঠোর লকডাউনে গণপরিবহন চলাচলে রয়েছে কড়াকড়ি। এর মধ্যেই দুর্ভোগ মাড়িয়ে নগরে ফিরছে মানুষ। রিকশায় চড়ে, পায়ে হেঁটে নগরীতে এসেছেন অনেকে। আবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার কর্মস্থলে যাচ্ছেন কর্মজীবীরা। যারা গত ২৩ জুলাইয়ের আগে কর্মস্থলে ফেরেননি, তাদের আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্ব স্ব গ্রামে অবস্থানের নির্দেশনা রয়েছে। তবে তা মানছেন না অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবীরা। বিশেষ করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার ব্যাংক কর্মকর্তারা প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে ছুটেছেন গন্তব্যের উদ্দেশে। বিকেল ৪টা, নতুন ব্রিজ এলাকা। কথা হয় জাহাঙ্গীর আলমের সাথে। তিনি গ্রামের বাড়ি চন্দনাইশের গাছবাড়িয়া থেকে এসেছেন নগরীতে। সাথে স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান। জাহাঙ্গীর বলেন, কোরবানির ছুটিতে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম। আমার ছোট সন্তান ক্লাস টুতে পড়ে। স্কুল বন্ধ থাকলেও বাসায় হোম টিউটর আসেন। তাই ছুটি শেষে পরিবার নিয়ে নগরীর বাসায় আসছি। গাড়ি না পাওয়ায় প্রথমে ব্যাটারি রিকশা করে পটিয়া। পরে আরেকটি ব্যাটারি রিকশা করে নতুন ব্রিজ আসতে চাইলে ভেল্লাপাড়া এলাকায় আটকে দেয়া হয়।
পটিয়া থেকে ভেল্লা পাড়া পর্যন্ত দুইশ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে বলে জানান জাহাঙ্গীর। এরপর ভেল্লাপাড়া ব্রিজ পার হয়ে মইজ্জ্যারটেক এসেছেন রিকশায় চড়ে। হেঁটে কর্ণফুলী ব্রিজ পার হয়েছেন। শুধু জাহাঙ্গীর নন, অসংখ্য মানুষ, কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে, কেউ পরিবার ছাড়া কর্মস্থলে এসেছেন। যারা বেশিরভাগই কোরবানিতে গ্রামের বাড়িতে ছুটি কাটাতে গিয়েছেন। তবে স্বল্প দূরত্বের লোকজন বাদেও সরকারি ঘোষণাকে উপেক্ষা করে দেশের দূরদূরান্তের নানা জেলায় ছুটে যাচ্ছে কর্মজীবীরাও।
মইজ্জ্যারটেক এলাকায় বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পুলিশি চেকপোস্টে প্রথমে আটকে দেওয়া হয় চট্টমেট্রো-চ-১১-৮৪৪৮ নম্বরের হায়েসটি। গাড়িটিতে রয়েছে ১০ জনের মত যাত্রী। গাড়ির সামনে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তা বহনকারীর তথ্য উল্লেখ রয়েছে। একই সময়ে আরেকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের স্টিকার লাগানো গাড়িও আসে সেখানে। এ সময় চেকপোস্টে গাড়ি দুটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। গাড়ি দুটোর গন্তব্য নিশ্চিত হওয়া না গেলেও এক পুলিশ সদস্য বলেন, গাড়ি দুটি হয়তো ঢাকায় যাচ্ছে।
এ সময় মইজ্জ্যারটেক এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন কর্ণফুলী থানার এসআই এমদাদ। চেকপোস্টে হায়েস-প্রাইভেটকারকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই এমদাদ বলেন, কাদের, কিভাবে ছাড়া হচ্ছে না হচ্ছে, তা আমি জানি না। পরে পৌনে পাঁচটার দিকে নতুন ব্রিজের গোলচত্বরে আবারও চেকপোস্টে আটকে দেওয়া হয় হায়েসটিকে। এ সময় চেকপোস্টে দায়িত্বপালনকারী পুলিশ কর্মকর্তা এসআই সুখেন্দুকে মুঠোফোন ধরিয়ে দেন গাড়ির চালক। এরপর গাড়িটি ছেড়ে দেন তিনি।
অন্যদিকে বিকেল সোয়া পাঁচটায় ‘জরুরি ব্যাংকিং সেবায় নিয়োজিত’ লিফলেট লাগানো চট্টমেট্রো-চ-১১-৭২১৪ হায়েসটিও আটকানো হয় মইজ্জ্যারটেকের চেকপোস্টে। একই কায়দায় ওই গাড়িও ছেড়ে দেওয়া হলে গন্তব্যের দিকে ছুটে চলে সেটি।
এ সময় চেকপোস্টের কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন স্থানীয় লোকজন। তাদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, লকডাউন ঘোষণা দিয়ে সরকারি অফিস-আদালত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অফিসের লোকজনকে ২৩ জুলাইয়ের আগে কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশনা দেওয়া হলেও অনেকে তা মানেননি। সবাই কোরবানির ছুটির তিন-চারদিন পরে কর্মস্থলে যাওয়া শুরু করেছেন। এখানে পুলিশ তাদের শৈথিল্যতা দেখাচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, গতকাল শনিবার দুপুরের পর থেকে মইজ্জ্যারটেক চেকপোস্টে অন্তত ৩০টির বেশি যাত্রীবাহী হায়েস নগরীর দিকে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসম্মুখসারির যোদ্ধাদের পরিবারের আঠারো ঊর্ধ্বরা পাবেন টিকা
পরবর্তী নিবন্ধশিগগিরই করোনার টিকা উৎপাদনে যাচ্ছে বাংলাদেশ