দুর্ভোগের অন্য নাম কালুরঘাট সেতু

| রবিবার , ৯ অক্টোবর, ২০২২ at ৭:৪৯ পূর্বাহ্ণ

প্রতিদিন সকালে অফিসে যাবার পথে কালুরঘাট সেতুতে অপেক্ষার প্রহর না গুণে নিমিষেই পাড়ি দেয়া সৌভাগ্যের। আজও সৌভাগ্যের চাবি অধরাই রইলো। রোদের দাবদাহ থেকে বাঁচতে কর্ণফুলীর পশ্চিম পাড়ে সেতুর গোঁড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা শতবর্ষী বট বৃক্ষের ছায়ায় দাঁড়ালাম। শরতের উজাড় করা রোদ নেমেছে গাছে গাছে, পাতার ফাঁক ফোঁকরে। এরই মধ্যেই যতটুকু সম্ভব নিজেকে গাছের ছায়ায় আড়াল রাখার চেষ্টা। ‘ছোড ছোড ঢেউ তুলি ফানি’ তখন ‘লুসাই পাহাড়ত্তুন লামিয়ারে যারগৈ কর্ণফুলী।’ অপেক্ষমাণ গাড়ীর ইঞ্জিনগুলোতে একসাথে গড় গড় শব্দ হলে বুঝলাম এক লাইনের সেতুটির বিপরীত দিকে বন্ধ রেখে এইদিকের যানবাহন ছাড়া হযয়েছে। কাঠ ফাটা রোদে নড়বড়ে সেতুতে মন্থর গতিতে এগিয়ে চলা গাড়ীতে বসে ঘেমে একাকার। সেতুতে বড় বড় গর্ত। বিভিন্ন অংশে ভেঙে পড়েছে রেলিং। ক’দিন আগে পণ্যবোঝাই একটি ট্রাক কাত হয়ে নদীতে পড়তে পড়তে রক্ষা পেয়েছে। দুর্ঘটনার মুহূর্তে সেতুর দু’পাশে তীব্র যানজটে আটকে পড়া যাত্রীসাধারণকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
সেতু দিয়ে রিকশা, সাইকেল, ভ্যনগাড়ি সহ পশু পারাপারের চিত্রও চোখে পড়ে। কখনো কখনো ট্রেন ও গাড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে দৌড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হয় মানুষকে। গত বছরের গোঁড়ার দিকে ভুল সিগন্যালের কারণে সেতুতে ট্রেনে কাটা পড়ে করুণ মৃত্যু হয়েছিল সাইকেল আরোহী মামুনের। একমাত্র উপার্জনকারী মানুষটি ছিলেন স্ত্রী-সন্তানদের যষ্টি। বোয়ালখালীর সারোয়াতলী গ্রামের সেই মামুনের অসহায় পরিবারের খবর এখন আমাদের অজানা।
আমাদের দুর্ভোগের চিত্র আজাদীসহ বিভিন্ন দৈনিকে উঠে এসেছে বহুবার। সম্প্রতি স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম দৈনিক আজাদী পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে কালুরঘাট সেতুটি এখন দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আমাদের এই দাবির কথা শুনার কেউ কি আছেন! এসব ভাবনা, দুর্ভাবনার মাঝেই দুর্ভোগের সেতু পার হয়ে গাড়ি ছুটে চলল কর্ণফুলীর তীর ঘেষে গাছ গাছালিতে ঢাকা আঁকাবাঁকা সড়ক ধরে। সবুজ অরণ্য। কিন্তু সময়মত অফিসে পৌঁছানোর উৎকণ্ঠার মাঝে প্রকৃতির এই মনকাড়া রূপ হৃদয় ছোঁতে পারে না। শেষ পর্যন্ত অফিসে পৌঁছাতে পারলেও জীবন থেকে হারিয়ে যায় একটি ঘন্টা।
কে আর ইউ এম সামশুল আরেফিন
চট্টগ্রাম

পূর্ববর্তী নিবন্ধচে গুয়েভারা : বিপ্লবের জীবন্ত আইকন
পরবর্তী নিবন্ধপ্রাণের নবী