সীতাকুণ্ডে আগাছা দমনের বিষাক্ত ওষুধ ছিটিয়ে দিয়ে ১৭ হাজার ফুলকপির চারা নষ্ট করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বোয়ালিয়াকুল সাগর উপকূলের দুই কৃষকের জমিতে এ ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ওই দুই কৃষক।
গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, সারি–সারি ফুলকপির গাছের পাতা জ্বলে লালচে রং ধারণ করে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক ও দিদারুল আলম বলেন, গত কয়েকদিন আগে রাতের আঁধারে আমাদের ফুলকপি ক্ষেতে কে বা কারা আগাছা দমনের ঔষধ ছিটিয়ে দেয়। এর কয়েকদিন পর থেকে গাছগুলো ধীরে ধীরে পাতা জ্বলে নষ্ট হয়ে যেতে শুরু করে। প্রথম পর্যায়ে কোনো ছত্রাকের আক্রমণে গাছগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ধারণা করে প্রতিকার হিসাবে কয়েক হাজার টাকার কীটনাশক ওষুধ ছিটানো হয়। কিন্তু কোনো ওষুধ প্রয়োগে কাজ হচ্ছে না এবং আশপাশের অন্য গাছ ঠিক থাকায় বুঝতে পারি এখানে বিষযুক্ত আগাছানাশক ওষুধ ছিটানো হয়েছে।
কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমার জমিতে ১০ হাজার ফুলকপি গাছ ছিল। গাছগুলো ফসল দেওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে অন্তত ৩ লাখ টাকার ফুলকপি বিক্রি করতে পারতাম। এই ক্ষেতে এ পর্যন্ত ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বেশির ভাগ টাকা এনজিওর ঋণ ও স্থানীয়ভাবে ধার নেয়া হয়েছে। এখন আমি দিশেহারা। কীভাবে ধার পরিশোধ করব, কীভাবে সংসার চালাব?
অপর কৃষক দিদারুল আলম বলেন, সাগর পাড়ের মাটি লবণাক্ত হওয়ায় এখানে ফসল ফলানো অনেক কষ্টকর। আমার নিজের কোনো জমি না থাকাতে বাধ্য হয়ে এখানে এসে অন্যের জমি বর্গা চাষ করতে হয়। কিছুদিন আগে আমার একমাত্র মাছের প্রজেক্টে বিষ ঢেলে সবগুলো মাছ মেরে ফেলেছে কেউ। এখন ৭ হাজার ফুলকপির গাছ বিষ প্রয়োগে নষ্ট করে দিল। আমার সবটাই ঋণের টাকা। এখন আমি ঋণ শোধ করব কীভাবে, পরিবার নিয়ে খাব কী? বাড়িতে তিনটি মেয়ের মুখের দিকে তাকালে আমার খালি কান্না আসে। কারো সাথে শত্রুতা থাকলে আমাকে মেরে ফেলত, আমার ক্ষেতের কেন ক্ষতি করল?
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বলেন, বিষ প্রয়োগে ফসল নষ্ট করা একটি চরম গর্হিত কাজ। ফসল কৃষকের কাছে সন্তানের মতো। ফসলের কোনো ক্ষতি হলে কৃষকদের অনেক কষ্ট হয়। এটা অত্যন্ত ঘৃণিত ও নিন্দনীয় কাজ।