দুর্বৃত্তের আগুনে পুড়ছে রেললাইনের দুই পাশের গাছের চারা

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের চন্দনাইশ-সাতকানিয়া অংশ স্থানীয় কিছু লোক জায়গা দখল করে চাষ করতে আগুন লাগায়

মুহাম্মদ এরশাদ, চন্দনাইশ | রবিবার , ৬ এপ্রিল, ২০২৫ at ৮:৪৮ পূর্বাহ্ণ

দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামকক্সবাজার রেললাইনের দুই পাশে রোপিত বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা। বেশ কিছুদিন ধরে এ লাইনের চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া অংশের বিভিন্ন স্থানে চারাগাছগুলো পুড়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আগুন প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। ইতোমধ্যে সাতকানিয়ার কালিয়াইশ, কেউচিয়া, চন্দনাইশের দোহাজারীসহ বিভিন্ন স্থানে রেললাইনের দুই পাশের বিস্তীর্ণ অংশে এমন পোড়া অংশ দেখা যাচ্ছে। গতকাল শনিবার সকালেও সাতকানিয়ার কালিয়াইশ হিন্দুপাড়া অংশে রেললাইনের পাশে শুকনা পাতা, খড়কুটোয় কে বা কারা আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে পুড়ে যায় বিস্তীর্ণ অংশ। আগুনে শুকনা পাতা ও খড়কুটোর পাশাপাশি রেললাইনের মাটিক্ষয় রোধকল্পে এবং স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য রোপিত চারাগাছগুলো পুড়ে যায়। পাশাপাশি গজিয়ে ওঠা কাঁচা ঘাস ও লতাপাতাও পুড়ে যায়। এতে করে আগামী বর্ষা মৌসুমে প্রবল বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে এই রেললাইনটির বিভিন্ন স্থানে মাটি সরে গিয়ে রেল চলাচল ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, চট্টগ্রামকক্সবাজার রেললাইনটি পর্যটন নগরী কক্সবাজারে যাতায়াতে দেশিবিদেশি পর্যটক ও সাধারণ যাত্রীদের নিকট ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে। দিন দিন বাড়ছে যাত্রীর সংখ্যা। যাত্রীর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে কক্সবাজার এঙপ্রেস ও পর্যটন এক্সপ্রেস নামে দুই জোড়া ট্রেন সরাসরি ঢাকা থেকে কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সৈকত এক্সপ্রেস ও প্রবাল এক্সপ্রেস নামে ২ জোড়া ট্রেন চলাচল করছে। দিন দিন চট্টগ্রামকক্সবাজার জাতীয় মহাসড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আগামীতে এ রেললাইনটি আরো জনপ্রিয়তা পাবে এবং ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু দেখভাল ও তদারকির অভাবে রেললাইনটি ধীরে ধীরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এ লাইনের চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া অংশের বিভিন্ন এলাকায় রেললাইনটির মাটিক্ষয় প্রতিরোধ, নিরাপত্তাহীনতা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে রেললাইনের দুই পাশে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষুধি গাছের চারা রোপণ করা হয়েছিল। কিন্তু বারবার আগুন দেওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকায় চারাগাছগুলো পুড়ে যাচ্ছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে আগুন নেভাতে এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এগিয়ে আসছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

গতকাল কালিয়াইশ এলাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, রেললাইনের পার্শ্ববর্তী কতিপয় লোক রেললাইনের পাশের অংশ দখল করে চাষাবাদ করার জন্য পরিষ্কারের নামে পরিকল্পিতভাবে শুকনা পাতায় আগুন লাগায়। এতে পাতা ও খড়কুটোর সাথে চারাগাছ, কাঁচা ঘাস, লতাপাতা পুড়ে যাচ্ছে। পরবর্তীতে সেখানে চাষাবাদ করবে তারা।

গত সপ্তাহে চট্টগ্রামকঙবাজার মহাসড়কের রেলক্রসিংয়ের পশ্চিম পাশেও বিস্তীর্ণ এলাকায় রেললাইনের দুই পাশে শত শত গাছের চারা পুড়ে যায়। গত ১ মাসের বেশি সময় ধরে এ লাইনের বিভিন্ন অংশে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। তবে আগুন নেভাতে কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।

দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলেন, রমজানেও দোহাজারী স্টেশনের পাশে কিছ লোক রেললাইনের পাশে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় আমসহ বিপুল সংখ্যক বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ ও বনজ গাছ পুড়ে যায়। চট্টগ্রামকঙবাজার রেললাইনটি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এখনো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেননি। ফলে এ লাইনটি তদারকির দায়িত্ব এখনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হাতেই রয়েছে। তিনি জানান, এ ব্যাপারে স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হচ্ছে। বিষয়টি স্থানীয় মসজিদের ইমামদেরও বলেছি, যাতে লোকজনকে এ ব্যাপারে সচেতন করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় মানসিক প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণ ও বাক প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণচেষ্টা, গ্রেপ্তার ২