অর্থ সংকটে থাকা ‘দুর্বল’ ব্যাংকগুলোকে আন্তঃব্যাংক ছাড়া বিকল্প কোনো উপায়ে তারল্য সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে যেসব ব্যাংক তারল্য সংকটে রয়েছে সেসব ব্যাংকে বিকল্প পন্থায় কোনো রকম সহায়তা দেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এসব দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করছে। খবর বিডিনিউজের।
বর্তমানে চরম নগদ অর্থের সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতে পারছে না। নতুন করে আমানতও পাচ্ছে না। এ অবস্থায় দুর্বল এসব ব্যাংকের নাজুক তারল্য পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে বিকল্প পদ্ধতিতে অর্থ যোগান দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ট্রেজারি বিল ও বন্ড বাজারে ছেড়ে টাকা তুলে তা অর্থ সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো দেওয়ার চিন্তা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সাধারণত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক অন্য ব্যাংকগুলোতে ট্রেজারি বিল ও বন্ড বিক্রি করে। এই বিল ও বন্ড হচ্ছে এক রকমের জামানত। এগুলোর বিপরীতে ব্যাংকগুলো টাকা নিয়ে থাকে। ব্যাংকগুলোতে যখন তারল্য সংকট তৈরি হয় তখন বিল–বন্ডের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা ধার নেয়। কোনো ধরনের জামানত ছাড়া টাকা ধার নেওয়া যায় না। তবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ইসলামী ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকে বিশেষ অনুমোদনে সিকিউরিটি ছাড়াই টাকা ধার দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকার পতনের পর আরও কয়েকটি ব্যাংক গ্রাহকদের টাকা দিতে না পারার কাতারে যুক্ত হয়। দুর্বল এসব ব্যাংকেরও জামানত বা সিকিউরিটি রাখার মত অবস্থা নেই। অর্থাৎ ট্রেজারি বিল–বন্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিয়ে টাকা ধার নেবে সেই অবস্থাও নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ গ্যারান্টির বিপরীতে এসব ব্যাংককে সবল কিছু ব্যাংক আন্তব্যাংক ব্যবস্থার রীতি মেনে টাকা ধার দিচ্ছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। তবে এ অবস্থায় কতদিন সেসব ব্যাংক টাকা দিতে পারবে, সেই প্রশ্ন থেকে বিকল্প পদ্ধতির বিষয়টি সামনে এসেছে। ট্রেজারি বিল ও বন্ড থেকে টাকা ধার দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আমানত পেলে সেখান থেকে নূন্যতম ১৩ শতাংশ এসএলআর (স্ট্যাচুটরি লিকুইডিটি রেশিও) হিসাবে সংরক্ষণ করতে হয়। ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এ হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। মূলত এসএলআর থেকেই ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল–বন্ডে বিনিয়োগ করে। নানা অনিয়মে খেলাপি ঋণে জর্জরিত হওয়া এসব ব্যাংক গত আড়াই বছর ধরে এসএলআর সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, আন্তঃব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা দেওয়া পর্যাপ্ত নয়। যেকারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিভিন্ন বৈঠকে বিকল্প পন্থায় এসব দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টাকা দেওয়ার প্রস্তাব আসছে।