দুর্নীতি মামলায় টিউলিপ সিদ্দিকের বিচার ও দণ্ডাদেশ নিয়ে দুদকের ব্যাখ্যা

| বৃহস্পতিবার , ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৪:১২ পূর্বাহ্ণ

গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিচার ও দণ্ডাদেশ নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে ওঠা আলোচনার প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলার নথিউপাত্ত বিশ্লেষণ করে একটি স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছে। দুদক জানায়, নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছেঅভিযোগগুলো মূলত শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে প্লট বরাদ্দসংক্রান্ত দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। একটি মামলার নথিতে উল্লেখ আছে, শেখ হাসিনা সরকার প্রধান থাকা অবস্থায় টিউলিপ সিদ্দিক নিজেও একটি সরকারি প্লট বরাদ্দ পেয়েছিলেন।

তিনটি মামলার মধ্যে একটি মামলার বিচার ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বিশেষ ট্রাইব্যুনালএ বিশেষ মামলা নং ১৮/২০২৫এ টিউলিপ সিদ্দিককে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, তিনি তার প্রভাব ব্যবহার করে খালা শেখ হাসিনাকে পরিবারের সদস্যদের জন্য প্লট বরাদ্দে প্ররোচিত, উৎসাহিত ও প্রভাবিত করেছিলেন। গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে দুদকের এ ব্যাখ্যা জানানো হয়। খবর বাসসের।

মামলায় মোট ৩২ জন সাক্ষী জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের কয়েকজন আদালতে শপথ নিয়ে বলেছেনশেখ হাসিনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ আত্মীয় টিউলিপ সিদ্দিক নিজের প্রভাব খাটিয়ে এসব প্লট বরাদ্দ নিশ্চিত করেন। নথিতে থাকা পরিস্থিতিগত প্রমাণটিউলিপ, তার মা ও ভাইবোনদের নামে প্লট বরাদ্দদেখায় যে তিনি শুধু একটি নয়, বরং একাধিকবার বেআইনি প্লট বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন। এসব অপরাধ দণ্ডবিধির ১৬১, ১৬৩, ১৬৪, ১৬৫(কা), ২০১, ২১৭, ২১৮, ৪০৯ ও ৪২০ ধারার পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭এর ৫() ধারায় শাস্তিযোগ্য।

দুদক আরও জানায়, টিউলিপ সিদ্দিক তার খালার ওপর প্রভাব খাটিয়ে গুলশান২ এর অত্যন্ত মূল্যবান একটি প্লট (প্লট নং সিডব্লিউএন ()-২৭; পরবর্তীতে পরিবর্তিত হয়ে প্লট নং ০৫, ব্লক এনই (), গুলশান; ফ্ল্যাট নং বি/২০১; বাড়ি নং ৫এ ও ৫বি; বর্তমানে বাড়ি নং ১১৫ ও ১১বি; রোড নং ৭১) বরাদ্দ পান। এগুলো কোনো দূরবর্তী কৃষিজমি নয়্তঢাকার সবচেয়ে অভিজাত অঞ্চলের সরকারি আবাসিক প্লট, যেখানে একাধিক ফ্ল্যাট বা বড় বাড়ি নির্মাণের সুযোগ ছিল। জনসংখ্যার চাপ কমাতে সরকারি আবাসন প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত এসব জমি প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনদের কাছে বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা পারিবারিক সম্পদ বৃদ্ধির অনৈতিক প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করেছে।

দুদকের তথ্যানুসারে, টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের লন্ডনে পাঁচটি ফ্ল্যাট ক্রয়ের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট, যেগুলো অফশোর কোম্পানির সহায়তায় কেনা হয়। দুদকের প্রশ্নজনপরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি কীভাবে ঢাকা ও লন্ডনের মতো ব্যয়বহুল দুটি শহরে একাধিক সম্পত্তি কেনার মতো বিপুল সম্পদের মালিক হন?

এ বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের ব্যাখ্যা পাওয়া গেলে বিষয়গুলো আরও পরিষ্কার হতো। কিন্তু তিনি অনুপস্থিত থাকায় তার অনুপস্থিতিতেই বিচার সম্পন্ন করতে হয়। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাননিটিউলিপ সিদ্দিকের এ দাবি দুদক সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বলে উল্লেখ করেছে।

কমিশন জানায়, তাকে আদালতে হাজির হওয়ার এবং আইনজীবী নিয়োগের পূর্ণ সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি নিজেই বিচার এড়িয়ে গেছেন।

দুদক বলেছে, উপস্থাপিত নথিপত্র, সাক্ষ্য এবং পরিস্থিতিগত প্রমাণ স্পষ্ট করে যে টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে দুর্নীতি সহায়তা ও প্ররোচনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তথ্যউপাত্তের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা বা তিনি নির্দোষএমন দাবি করার কোনো অবকাশ নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএভারকেয়ারের কাছে হেলিকপ্টার নামবে, বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শ
পরবর্তী নিবন্ধজয়ের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে