দুর্নীতি এখন সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্নীতি প্রতিটি সমাজ ও দেশের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা। বিভিন্ন সমাজ–দেশে দুর্নীতির কারণ, ধরন ও প্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন। দুর্নীতি অনেক রূপে ঘটতে পারে। অনেকেই দুর্নীতি বলতে শুধু অবৈধ বা অনৈতিক আর্থিক লেনদেনকে বোঝে। কিন্তু যা কিছু নীতির পরিপন্থি বা নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক, তা–ই দুর্নীতি। নিজে সুবিধা না নিয়েও নিকটজনকে অপ্রাপ্য বা অনৈতিক সুবিধা পাইয়ে দেওয়া, যোগ্যজনকে তার ন্যায্য সুবিধাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করাও গুরুতর দুর্নীতি। নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করাও বড় ধরনের দুর্নীতি। কারও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা একটি দীর্ঘমেয়াদি দুর্নীতি। দুর্নীতির এই রূপটি দুর্নীতির অপসংস্কৃতি লালন এবং সমাজকে ভেতর থেকে ক্ষয় করার জন্য দায়ী। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্রুততম উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। কিন্তু দেশের চলমান উন্নয়ন ও অগ্রগতি টেকসই করার পথে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এর মধ্যে দুর্নীতিকে বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়নের সবচেয়ে বড় অন্তরায় হিসেবে বিবেচনা করা যায়। দুর্নীতি সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা স্পষ্ট নয়। দুর্নীতি দেশের সব অর্জন এবং জাতীয় উন্নয়নের সব প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দিতে পারে। এ কালব্যাধির করাল গ্রাসে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ক্রমশ হয়ে উঠতে পারে অনিশ্চিত। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্নীতির কালো হাত নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিতে হবে। বস্তুত এই মুহূর্তে বাংলাদেশ যেখানে অবস্থান করছে, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন করা গেলে অতিদ্রুত সেই অবস্থান আরও অনেক ওপরে উঠে যাবে, এতে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। দুর্নীতি দমন, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ তথা সমাজে সততা ও নিষ্ঠাবোধ বিকাশের লক্ষ্যে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সামাজিকভাবে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব জাগ্রত না হলে কেবল দুর্নীতি দমন কমিশনের একার পক্ষে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়। তাই দুর্নীতি প্রতিরোধে সকলেরই এগিয়ে আসা উচিত।