সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে যারা দুর্নীতি ও অনিয়ম করবে তাদের রেহাই দেয়া হবে না। দুর্নীতি ও অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেলে ৭ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার তদন্ত মো. জহিরুল হক। এ ব্যাপারে তিনি সাংবাদিকদের প্রকৃত তথ্য তুলে ধরার আহ্বান জানান। তিনি বলেন সংবাদ মাধ্যমে দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রকৃত তথ্য উঠে আসলে ভালো। কিন্তু মিথ্যা তথ্য দিলে সবাই বিভ্রান্ত হয়। গতকাল বুধবার বিকেলে কক্সবাজারে দুর্নীতি দমন কমিশনের উদ্যোগে গণশুনানি শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি কক্সবাজারের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ আগামী ৭ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রধানদের নির্দেশ দেন। দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহিরুল হক বলেন, আমাদের দেশটা খুব বেশি উদ্ভট। এখানে অশিক্ষিত মানুষগুলো বিদেশ গিয়ে অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠান। আমাদের রেমিটেন্স বাড়ে। আর শিক্ষিত মানুষ দেশের টাকা লুট করে বিদেশে টাকা পাচার করেন। যে টাকা জমা হয় সুইস ব্যাংকে। এসব শিক্ষিত দুর্নীতিবাজদের প্রকাশ্যে ঘৃণা করতে হবে।
তিনি জানান, সব দুর্নীতি নিয়ে দুদক কাজ করে না। দুদক যে সব অভিযোগ আমলে নিয়ে কাজ করে তার বেশিরভাই সরকারি প্রতিষ্ঠান ঘিরে। এর বাইরে মানি লন্ডারিং বিষয়ে কাজ করে। অপরাপর অপরাধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা কাজ করে। দুদক আমলে নেওয়া মামলায় এ পর্যন্ত দুর্নীতির ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ ও মানি লন্ডারিং এর ক্ষেত্রে শত ভাগ সফলতা পেয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। বুধবার সকাল ১০ টায় শুরু হওয়া এ গণশুনানি চলে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত। এসময় ১০৫ জন ভুক্তভোগী ও সেবা প্রত্যাশীদের মধ্যে ৭৯টি অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হয়। গণশুনানিতে উত্থাপিত অধিকাংশ অভিযোগ ছিল ভূমি সংক্রান্ত। এতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, জেলা রেজিস্ট্রার ও সাবরেজিস্ট্রার অফিস, সমবায় কার্যালয়, কঙবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ, জেলা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন সেবাগ্রহীতারা। শুনানিতে উত্থাপিত এবং অনুত্থাপিত অভিযোগ আগামী ৭ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি ও প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক। গণশুনানি সঞ্চালনা করেন কঙবাজারের জেলা প্রশাসক মো. শাহীন ইমরান। শুনানিতে উপস্থাপিত অভিযোগের বেশিরভাগই কঙবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ বা এলএ শাখা নিয়ে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আকতার হোসেন, দুদক চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. মাহমুদ হাসান, কঙবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলামসহ দুদক সমন্বিত কঙবাজার জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তাসহ সকল সরকারি দপ্তর প্রধান, জনপ্রতিনিধিসহ সুশীল সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকরা বক্তব্য দেন। এরপর পরই শুরু হয় জমা হওয়া অভিযোগের বিষয়ে গণশুনানি। যেখানে মঞ্চ উঠে ভুক্তভোগীরা উপস্থাপন করেন হয়রানি, অনিয়ম, দুর্নীতির নানা অভিযোগ। আর একই মঞ্চে বসে এসব অভিযোগের উত্তর দেন অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। উভয় পক্ষের বক্তব্যের পর ছিল দুদকের নিজস্ব মতামতও।