ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘৫ অগাস্টের পর দেশে দুর্নীতি বেড়েছে অথবা কমেছে, সে তথ্য টিআইবির কাছে এখন নেই। তুলনামূলক তথ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। তবে দুর্নীতি অব্যাহত আছে। আর তার দৃষ্টান্ত কিন্তু আমরা ৫ অগাস্ট বিকালবেলা থেকে দেখেছি। দলবাজি, দখলবাজি ও চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ক্ষমতা ও গভর্ন্যান্স স্পেস এর ক্ষমতাকে অপব্যহার করে ঠিকই একটি মহল দুর্নীতিতে লিপ্ত রয়েছেন। সরকারের অভ্যন্তরীণ কোনো কোনো ক্ষেত্রেও দুর্নীতি হয়েছে।’ তিনি বলেছেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকার কঠোর অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়েছে।’ গতকাল রোববার টিআইবি কার্যালয়ে ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের ইশতেহার প্রণয়ণে টিআইবির সুপারিশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ মন্তব্য করেন। খবর বিডিনিউজের।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই মধ্যবর্তীকালীন সরকারের সময় সম্ভাবনা ছিল আরও কঠোরভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানটা গ্রহণ করার। সেটি করতে তারা হয়তো ব্যর্থ হয়েছে, সেটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্ট নিরপেক্ষ, স্বনামধন্য, স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত, স্বাধীনভাবে কাজ করতে সক্ষম এমন দক্ষ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন ব্যাংক কমিশন গঠন করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির তরফে ৫২টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়, যার মধ্যে রয়েছে, ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে গোষ্ঠী ও পরিবারতন্ত্র থেকে মুক্ত করা; বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায় রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে অপসারণ করা এবং এ জাতীয় চর্চা বন্ধ করা। এছাড়া বিগত সময়ে সংগঠিত ব্যাংক এবং পুঁজিবাজারে প্রতারণা, অনিয়ম–দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানানো হয়। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ব্যবসায় খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা শুধু আইনি কাঠামো দিয়ে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, এটি খাতের ভেতর থেকেই আসতে হবে। এজন্য টিআইবি তাদের প্রস্তাবনায় ‘বিজনেস ইন্টেগ্রিটি প্রোগ্রাম’–এর কথা বলেছে, যেখানে ব্যবসায়ী সমপ্রদায় নিজেরাই উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা, স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেবে।
গত ১৫ বছরে দেখা গেছে, স্বচ্ছতার অভাবে কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠী লাভবান হলেও বৃহত্তর অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এর ফলে রাষ্ট্রকাঠামো দখল ও কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠায় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর একটি অংশ ভূমিকা রেখেছে।
তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ব্যবসায় খাতের দুর্নীতি দুদকের শিডিউলের আওতায় আনার যে প্রস্তাব ছিল, সরকার নীতিগতভাবে সম্মত হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ব্যবসায় খাতে শুদ্ধাচার নিশ্চিত করা শুধু রাষ্ট্র বা জনগণের স্বার্থে নয়; ব্যবসায়ীদের নিজেদের টিকে থাকা ও দীর্ঘমেয়াদি লাভের জন্যও জরুরি।












