দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করতে হবে পরিবার থেকে

নগরে পথসভায় হাসনাত আবদুল্লাহ টাকার বিনিময়ে এবং মার্কা দেখে ভোট না দেওয়ার আহ্বান

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৮ মে, ২০২৫ at ৮:৩১ পূর্বাহ্ণ

টাকার বিনিময়ে এবং মার্কা দেখে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, যারা যোগ্য নেতৃত্ব আগামী নির্বাচনে আপনারা তাদের ভোট দেবেন। যদি দেখেন এনসিপিতে কোনো যোগ্য নেতৃত্ব নেই, তাহলে আপনাদের ভোট দেওয়ারও প্রয়োজন নেই। মার্কা দেখে ভোট দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যে আপনার সেবা করবে তাকে আপনারা ভোট দেবেন। যাদের জাতির কাছে কমিটমেন্ট রয়েছে, দেশের কাছে কমিটমেন্ট রয়েছে, আপনারা তাদের ভোট দেবেন।

গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় নগরীর চকবাজারে এনসিপি আয়োজিত পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে দুপুর ২টায় হাসনাত আবদুল্লাহ ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ জিইসিতে চট্টগ্রামের শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিকালে চকবাজার থেকে শুরু করে বহদ্দারহাট, অক্সিজেন, দুই নম্বর গেট, আগ্রাবাদ থেকে নয়াবাজার গিয়ে এনসিপির পথসভা শেষ হয়। এর আগে গত সোমবার উত্তর চট্টগ্রাম ও রোববার দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় পথসভা করে এনসিপি।

নগরীর পথসভায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই শুরুর আহ্বান জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই আমাদের ঘর থেকে শুরু করতে হবে। আপনার বাবা বেতন পান ৪০ হাজার টাকা, ফ্ল্যাট ভাড়া দেন ২৫ হাজার টাকা, আপনাকে আইফোন কিনে দেন দেড় লাখ টাকায়, আপনি যদি আপনার বাবার ইনকাম নিয়ে প্রশ্ন করতে না পারেন, তাহলে আপনার শিক্ষাটা যথাযথ হচ্ছে না। আমাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করতে হবে পরিবার থেকে। প্রথমে প্রশ্ন করতে হবে বাবার ইনকাম নিয়ে। বাবার ইনকামের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন করার সৎ সাহস যদি আমাদের থাকে, তাহলে রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা থাকে, তাদের প্রশ্ন করার সৎ সাহস আমরা অর্জন করতে পারব।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, স্বপ্নটাকে অনেক বড় করতে হবে, অনেক বড়। ক্ষমতাকে প্রশ্ন করা শিখতে হবে। আমরা আমাদের এই দেশটাকে আর কখনো কোনো ফ্যাসিবাদীর হাতে তুলে দেব না। আমরা চাই না, আমাদের কোনো ভাইবোন আবার রাস্তায় নামুক আর তাকে গুলি করে হত্যা করা হোক। আমরা চাই আমাদের রাজনীতিবিদ হবেন তারা, যারা শিক্ষিত, যারা মার্জিত, যাদের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কমিটমেন্ট রয়েছে। রাজনীতিকে যারা পেশা বানিয়েছে তাদের রাজনীতি করার কোনো প্রয়োজন নাই। রাজনীতি কোনো প্রাপ্তির জায়গা নয়, রাজনীতি হচ্ছে দেওয়ার জায়গা।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের নেতারা রাস্তার টাকা খেয়ে ফেলে। আমাদের দেশের নেতারা টেন্ডারবাজি করে। আমাদের দেশের নেতারা গরিবের সম্পদ লুণ্ঠন করে। আর আমাদের দেশের ভোটাররা ভোট বিক্রি করে দেয়। আমাদের দেশের ভোটাররা আগের রাতে ভোট বিক্রি করে দেয়। আপনি যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনের আগে নিজের যোগ্য ভোটার হওয়া উচিত।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আপনার বাবা, আপনার মা, আপনার পরিবারের দায়িত্বে যিনি রয়েছেন, তিনি যদি ভোট বিক্রি করতে চান আপনারা প্রতিবাদ করুন। আপনি বলুন, আপনারা যে আজ ভোটটা বিক্রি করে দিচ্ছেন, পাঁচ বছর আপনাদের নির্যাতন করবে। আমি নিজে যদি দুর্নীতি না করি, তাহলে আমার নেতা কখনো দুর্নীতিবাজ হতে পারবে না। আর আগের রাতে যদি আমি ভোট বিক্রি করে দিই, তাহলে পাঁচ বছর ধরে নেতা আমার ওপর জুলুম করবে, নির্যাতন করবে, আমি মুখ খুলতে পারব না। তিনি বলেন, সচিবালয়ে যারা আন্দোলন করছেন আপনারা কোনোভাবে যদি অন্তর্বর্তী সরকারকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেন, সেটা হতে দেব না।

পথসভায় এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা বলেন, আমরা একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চাই। আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে রাষ্ট্র তার নাগরিককে খুন করবে না, গুম করবে না। বিদ্যমান যে সংবিধান, এ সংবিধানের বলে হাসিনা আমাদের দেশের নাগরিকদের গুমখুন করেছে। আমরা চাই এ সংবিধান বিলোপ করে এমন একটি সংবিধান প্রণয়ন করতে, যার মধ্য দিয়ে আগামী দিনের সবার জন্য বাসযোগ্য একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তোলা যাবে।

কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব মীর আরশাদুল হক, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা আলম মিতু ও মো. আতাউল্লাহ, কেন্দ্রীয় সংগঠক আরমান হোসেন।

এনসিপি চট্টগ্রামের মিডিয়া উইংয়ের মুখপাত্র আরফাত আহমেদ রনি আজাদীকে বলেন, দুপুর আড়াইটায় পথসভা শুরুর কথা ছিল, কিন্তু সেটা শুরু হয়েছে বিকাল ৪টায় চকবাজার থেকে। এরপর বিকাল ৫টায় বহদ্দারহাটে, সাড়ে ৬টার দিকে অঙিজেনে, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দুই নম্বর গেটে, সাড়ে ৮টার দিকে আগ্রাবাদে এবং রাত সাড়ে ৯টার দিকে নয়াবাজারে পথসভা শেষ হয়। নিউ মার্কেটে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে নয়াবাজারে শেষ হয়। আপাতত চট্টগ্রামে এনসিপির পথসভা শেষ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচিন্ময়কে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি
পরবর্তী নিবন্ধসল্টগোলায় ইজারা দেয়া অস্থায়ী পশুর হাট বন্ধের দাবি