সাতকানিয়ায় ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র সরকারি চাল কালো বাজারে বিক্রি করা হয়েছে। এ অভিযোগে আবদুর রশিদ নামের একজনকে আটক করে ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। গত ২১ এপ্রিল সকালে উপজেলার চরতি ইউনিয়নের দুরদুরি এলাকার একটি কাঠের গুদাম থেকে এসব চাল উদ্ধার করা হয়। হত-দরিদ্র পরিবারে প্রতি কেজি ১০ টাকা মূল্যে বিক্রির ৭ বস্তা চাল তার কাঠের গুদাম থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম এ বিষয়ে সত্যতা যাচাই করেন। তালিকাভুক্ত ডিলার না হয়েও আবদুর রশিদের দোকানে ১০ টাকা মূল্যের সরকারি চাল বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে দায়িত্ব দেন।
অন্যদিকে, নগরীর পাহাড়তলী থানাধীন চাল বাজারে নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ অভিযান চালিয়ে একটি গুদাম থেকে বিপুল পরিমাণ সরকারি চাল জব্দ করেছে। প্রায় ৩০০ বস্তা সরকারি চাল নিয়ে একটি ট্রাক মেসার্স মাহি ট্রেডিংয়ের গুদামে প্রবেশ করেছে-এমন অভিযোগের ভিত্তিতে নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসি বন্দর আরাফাতের নেতৃত্বে সেখানে অভিযান চালায়। গুদামে আরো প্রায় এক হাজার বস্তা সরকারি চাল রয়েছে বলে জানা গেছে। চালের বস্তায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিল রয়েছে বলে জানানো হয়।
সারা দেশের খাদ্যগুদামে খাদ্য বিভাগের অধীনে ধান-চাল ইত্যাদি মজুত রাখা হয়। প্রায়ই এসব মজুতের হিসাবে শুভংকরের ফাঁকি ধরা পড়ে। মাঝেমধ্যে ধানের ওজনে চাল কিংবা চালের ওজন কমে যাওয়া ছাড়াও পোকায় খাওয়া, ইঁদুরে কাটা কিংবা পানিতে ভিজে পচে যাওয়ার কথা বলে একধরনের ‘নিয়মতান্ত্রিক’ অনিয়ম করা হয়। সরকারি হিসাবে খাদ্য বিভাগে মোট মজুতের পরিমাণ যত বলা হয়, আদতে সেখানে কত আছে, তা নিরূপণ করা আসলেই দুঃসাধ্য। সরকারি সংস্থাগুলোর এক হাত আরেক হাতের যোগসাজশে সব চলে বলে এক ধরনের অভিযোগ চালু আছে। যতদূর জানা যায়, একেকটি খাদ্যগুদামের তদারকিতে নিয়োজিত থাকেন ৮ থেকে ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। অনিয়ম হলে তাঁদের সবারই স্বেচ্ছায় বা বাধ্য হয়ে জড়িত থাকার কথা। অথচ খাদ্য বিভাগ থেকে অনিয়ম দুর্নীতির জন্য শাস্তি হয়েছে, এমন নজির নেই। বড়জোর কোথাও শুধু দারোয়ানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অথচ দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করার গাফিলতিও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এ ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, কিন্তু ধরা পড়ার ঘটনাগুলো খুবই বিচ্ছিন্ন। হঠাৎ হঠাৎ কিছু ঘটনা প্রকাশ পায়, বেশিরভাগ থাকে অপ্রকাশিত। পুলিশ ও প্রশাসনের নাকের ডগায় বিভিন্ন স্থানে এসব অনিয়ম চলে। অভিযোগ আছে, প্রশাসনের প্রভাবশালীদের সহায়তায় এসব অপকর্ম হয়ে থাকে। আমাদের বর্তমান ব্যবস্থা দুর্নীতির বিরুদ্ধে যতটা তৎপর, তার চেয়ে বেশি তৎপর দুর্নীতির খবর যেন প্রকাশিত না হয় সে ব্যাপারে। আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকের যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা, সেটা তারা ঠিকমত পালন করছে না। তারাও নানা হিসাব-নিকাশ করে চলে বলে অভিযোগ রয়েছে।
দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) বাংলাদেশ চ্যাপটার টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান পত্রিকান্তরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বিশ্বে এমন কোনো দেশ নেই যেখানে দুর্নীতি হয় না। বাংলাদেশের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখানে দুর্নীতির গভীরতা ও ব্যাপকতা দুটোই প্রবল। দুর্নীতি এখানে জীবনযাত্রার অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। টিআইবির সর্বশেষ জাতীয় খানা জরিপ অনুযায়ী, যাঁরা সেবা খাতে নিয়মিত ঘুষ দিতে বাধ্য হন, তাঁদের ৮৯ শতাংশ মনে করেন, ঘুষ ছাড়া তাঁদের ন্যায্য সরকারি সেবা পাবেন না, যা বৈশ্বিক বিবেচনায় সত্যি বিরল। শীর্ষ পর্যায়ে সরকারি ও রাজনৈতিক অবস্থান থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতাসহ কঠোর অবস্থানের কথা শোনা যায়। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয় না।
আমরা জানি, সরকার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে। সে-হিসেবে দুর্নীতিবিরোধী প্রত্যয়কে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।