টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটটা আসলে এমনই। আর এমন টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটইতো দেখতে চায় দর্শখরা। যেখানে চার আর ছক্কার বৃষ্টি হবে। যেমনটি হয়েছে গতকাল এবারের বিপিএলের প্রথম ম্যাচে। বরিশাল এবং রাজশাহীল উদ্বোধনী ম্যাচে দারুন প্রতিযোগিতা হয়েছে দু দলের ব্যাটারদের। বিশেষ করে বলতে হবে লড়াইটা হয়েছে বিজয়–রাব্বি এবং রিয়াদ–ফাহিমের মধ্যে। যেখানে বিজয়–রাব্বির ঝড় থামিয়ে দিয়েছে রিয়াদ–ফাহিমের টর্নেডো। দুর্দান্ত এক ম্যাচে এবারের বিপিএলে নবাগত দুর্বার রাজশাহীকে ৪ উইকেটে হারিয়ে শুভ সুচনা করল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল। মাহমুদউল্লাহ ও ফাহিম যখন জুটি গড়েছিলেন, ম্যাচ তখন হেলে পুরোপুরি দুর্বার রাজশাহীর দিকে। ফরচুন বরিশালের প্রয়োজন তখন ৪৬ বলে ৮৬ রান। উইকেট বাকি মোটে চারটি। এই দুজনের ব্যাটের তাণ্ডবে সেই চ্যালেঞ্জ স্রেফ তুড়িয়ে মেরে উড়িয়ে দিল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। উইকেটের পতন হলো না আর একটিও। ৩৫ বলে ৮৮ রানের বিধ্বংসী জুটিতে ম্যাচ শেষ ১১ বল বাকি থাকতেই। এবারের বিপিএল শুরুর আগে নানা বিষয়ে সমালোচনা হলেও মাঠের ক্রিকেটে উদ্বোধনী ম্যাচেই মিলল ইতিবাচকতার বার্তা। ইয়াসির আলি চৌধুরীর ৪৭ বলে অপরাজিত ৯৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে বিপিএল অভিষেকে দুর্বার রাজশাহী তুলেছিল ২০ ওভারে ১৯৭ রান। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বরিশাল ৬১ রানে ৫ উইকেট হারিয়েও শেষ পর্যন্ত জিতে গেল মাহমুদউল্লাহ–ফাহিমের ব্যাটের দাপটে।
টসে হেরে ব্যাট করতে নামা দুর্বার রাজশাহী দ্বিতীয় ওভারেই হারায় ওপেনার জিসান আলমকে। কাইল মায়ার্সের বল ক্রস খেলতে গিয়ে বোল্ড হন জিসান। নিজের পরের ওভারে আবার আবার মায়ার্সের আঘাত। এবার তার শিকার আরেক ওপেনার মোহাম্মদ হারিস। ফুলটস বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে সেই মায়ার্সের হাতেই ক্যাচ দেন হারিস। ২৫ রানে নেই রাজশাহীর দুই ওপেনার। জোড়া ধাক্কার পর দারুণ ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নেন এনামুল হক ও ইয়াসির আলি। তৃতীয় ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদিকে দারুণ কে ফ্লিক শটে ছক্কায় শুরু করেন এনামুল। রাজশাহী অধিনায়ক পরে নান্দনিক শটে ছক্কায় ওড়ান মেয়ার্স, রিপন মন্ডল ও তানভির ইসলামকেও। এনামুল ইনিংস গড়েন নিজের চেনা পথেই। তিনটি চার ও চারটি ছক্কার পরও ফিফটি করতে ৪২ বল লাগে তার। ইয়াসিরও ক্রিজে যাওয়ার পরপর একটি ছক্কা মারলেও এরপর একটু মন্থর গতিতে এগোন। ২২ বলে তার রান ছিল ২২। পরে গতি বদলে ঝড়ে বেড়ে ফিফটিতে পৌঁছে যান তিনি ৩৫ বলে। ফাহিমের টানা দুই বলে চার ও ছক্কার পর আরেকটির চেষ্টায় এনামুল আউট হন ৫১ বলে ৬৫ রান করে। চারটি চারের সঙ্গে তার ইনিংসে ছক্কা মারেন পাঁচটি। বিজয়েল আউটে ভাঙ্গে ১৪০ রানের রেকর্ড জুটি। কিন্তু ইয়াসিরকে থামাতে পারেনি বরিশালের বোলাররা। শেষ ওভারেও রিপনকে দুটি ছক্কা ও এক চারে শেষ পর্যন্ত ৯৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। সাতটি চারের সঙ্গে ছক্কা মারেন তিনি আটটি। টি–টোয়েন্টিতে তার আগের সর্বোচ্চ ছিল ৭৮। আর তাতে রাজশাহীর স্কোর গিয়ে দাড়ায় ১৯৭ রানে।
১৯৮ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নামেন বরিশালের দুই বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত। অপরদিকে রাজশাহী তাদের ইনিংস শুরু করে জিসান আলমের অনিয়মিত অফ স্পিন দিয়ে। কাজে লেগে যায় সেই পরিকল্পনা। ইনিংসের প্রথম বলেই শান্তকে এলবিডব্লিউ করে ফেরান জিসান। শান্তর ১৬৮ ম্যাচের টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ‘গোল্ডেন ডাক’ এটি। তাসকিনের বলে একটি ছক্কা মারার পরই আউট হন বরিশাল অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ৫ বলে ৭ রান তামিম হন এলবিডব্লিউর শিকার। নিজের পরের ওভারে বিপজ্জনক কাইল মেয়ার্সকে ফেরান তাসকিন। ৩০ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন তাওহিদ হৃদয় এবং মুশফিকুর রহিম। কিন্তু ২১ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি দুজন। হাসান মুরাদের বলে ১১ বলে ১৩ রান করে ফিরেন মুশফিক। নিজের পরের ওভারে তাওহিদ হৃদয়কেও ফেরান মুরাদ। ২৩ বলে ৩২ রান করে থামেন হৃদয়। নবম ওভারে বরিশালের সংগ্রহ দাড়ায় ৫ উইকেটে ৬১ রান। এরপর শাহীনশাহ আফ্রিদীকে নিয়ে ২৫ বলে ৫১ রানের জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ। তিন ছক্কায় ১৭ বলে ২৭ রান করে বরিশালের মৃতপ্রায় আশা নতুন প্রাণের সঞ্চার করেন আফ্রিদি। ম্যাচ যেন একটু হলেও ঝুকেছিল বরিশালের দিকে। কিন্তু তখনো যেন দিল্লী অনেকদুর। কিন্তু পাকিস্তানী ফাহিম আশরাফকে নিয়ে মাহমুদউল্লাহ ছুটলেন অসাধ্য সাধনের পথে। এক পর্যায়ে ৩৫ বলে ৮৪ রান দরকার ছিল বরিশালের। কিন্তু ফাহিম ও মাহমুদউল্লাহ টর্নেডো ব্যাটিংয়ে জিতে যায় বরিশাল। মুরাদের এক ওভার থেকে আসে ২০ রান। মৃত্যঞ্জয় চৌধুরীর এক ওভারে আসে ১৯ রান। লাহিরু সামারাকুনের ওভারে ফাহিমের তিন ছক্কায় রান আসে ২৫।শেষ পর্যন্ত পাঁচটি চার ও চারটি ছক্কার সাহায্যে ২৬ বলে ৫৬ রান করে ম্যাচের সেরা হন মাহমুদউল্লাহ। অপরদিকে সাতটি ছক্কার সাহায্যে ২১ বলে ৫৪ রানে অপরাজিত থাকেন ফাহিম আশরাফ। আর বরিশাল মাতে দুর্দান্ত জয়ে টুর্নামেন্ট শুরুর আনন্দে। ।