আমরা এখন পার করছি মাহে রমজানের মাগফেরাত তথা ক্ষমার দশক। রোজার মাসের মাঝামাঝি সময়ে এসে আমাদেরকে আরো বেশি ইবাদত বন্দেগিতে সচেষ্ট হতে হবে। মাহে রমজানে সংযম, সহনশীলতা, দয়া, সহানভূতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখার ঐশী নির্দেশনা রয়েছে মানুষের জন্য।
একে অপরের সুখ–দুঃখের অংশীদার হয়ে সমপ্রীতি ও সৌহার্দ্যবোধে উজ্জীবিত হওয়ার মাস পবিত্র রমজান। এ মাসে শ্রমিক–কর্মচারীদের থেকে কাজের বোঝা কমিয়ে দেয়ার জোর তাগিদ দিয়েছেন মহানবী (সা.)। সারা দিন রোজা রেখে কঠিন পরিশ্রমের কাজ পরিপূর্ণভাবে করা যে কতোটা দুঃসহ–দুঃসাধ্য তা হাড়ে হাড়ে টের পায় ধনী রোজাদাররা। শ্রমিকের কষ্টের দিনলিপি ও নিত্য জীবনযন্ত্রণা রোজার উপবাসব্রতের মধ্যে ধনীরা কিছুটা হয়তো অনুভব করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের দৈহিক পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যেসব শ্রমিক রুজি–রোজগার বা আয় উপার্জন করে, মালিক পক্ষকে শ্রমিক শ্রেণীর এই কষ্টসহিষ্ণু জীবনযাত্রা আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করা দরকার। মাহে রমজানে শ্রমিক, অধীনস্থ কাজের লোক ও পরিবার–গৃহস্থালির কাজে নিয়োজিত সকল শ্রমজীবীদের প্রতি সুদৃষ্টি–সহানুভূতি প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রিয় নবী (সা.)। কারণ এটা স্বাভাবিক যে, যারা বিভিন্ন শ্রমসাধ্য কাজে বাসা–বাড়ি বা মিল কারখানায় নিয়োজিত– রোজা রেখে অধিক পরিশ্রম করলে তারা অধিক ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত হয়ে পড়বে। এমনকি তারা কাজের চাপে শারীরিক–মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। তাই মাহে রমজানে কাজের লোক, শ্রমিক শ্রেণী ও অধীনস্থ লোকদের কাজের ভার হালকা ও সহনীয় পরিবেশ সৃষ্টির কথা বলেছেন আমাদের প্রিয় নবী (সা.)।
আল্লাহ পাক কোরআন মজিদে বলেন, ‘হাল্ জাযাউল ইহসান ইল্লাল ইহসান’ অর্থাৎ ভাল উত্তম কাজের প্রতিদান বা বিনিময় হচ্ছে একইভাবে তার প্রতিও সর্বোত্তম প্রতিদান দেওয়া। নবীজী (সা.) বলেছেন, ‘শ্রমিকের ঘাম শুকাবার আগেই তার ন্যায্য মজুরি দিয়ে দাও।’ এই নির্দেশনা যদি কারো দ্বারা লংঘিত হয় তবে দুনিয়া–আখেরাতে তাকে নির্মম পরিণতি সইতে হবেই।
অবহেলিত বিপন্ন খেটে খাওয়া মানুষের ন্যূনতম জীবন ধারণের সুযোগ সৃষ্টিতে ধনীরাসহ সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। সাম্য ও ইনসাফভিত্তিক কল্যাণময় সমাজ প্রতিষ্ঠায় সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে।